দেশে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনও চলছে। এরই মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এডিস মশাবাহিত এই রোগে। তাতে এ বছর ২ আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৩। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে এক বছরে সর্বাধিক ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া যে হারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডেঙ্গু ক্রমেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরাও ভেবে পাচ্ছেন না, ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেন এত মারাত্মক হয়ে উঠল?
একসময় ডেঙ্গু রোগকে মৌসুমি রোগ বলে মনে করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে বছরজুড়ে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আর এই রোগের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরও সেদিকে নজর না দেয়ায় এই বছরে রোগটি মারাত্মক হয়ে উঠেছে।
এর ফলে এই রোগের চার ধরনের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং রোগটি দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় পাকিস্তান আমলে, ১৯৬৫ সালে। তখন রোগটি ঢাকা ফিভার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে রোগটির সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো প্রায় দুই যুগেও রোগটির বিষয়ে রাষ্ট্র আশানুরূপ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অথচ কয়েক বছরে স্বাস্থ্য খাতে অনেক সাফল্য রয়েছে।
ডেঙ্গুর বিষয়ে একটি বিষয় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০০ সালের আগে আগে মানুষজন একটা ডেঙ্গুর একটা ধরনে আক্রান্ত হতো। ফলে তাদের মধ্যে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠত। কিন্তু পরবর্তী সময় মানুষ চারটা ধরনেই আক্রান্ত হতে শুরু করার পর থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন কাজ করে না। তখন সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তিনগুণ বেড়ে যায়।
বর্তমানে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার আছে। পর্যাপ্ত শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে, চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
যতই চিকিৎসাসেবা দেয়া হোক না কেন উৎস অর্থাৎ এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করা না গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে, জনপ্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বর্তমানে ১২৯টি দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সারাবিশ্বেই এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ কমাতে এডিস মশার বিস্তার ও এর প্রজননস্থল ধ্বংসের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে বা লার্ভা সৃষ্টির মতো উপযুক্ত পরিবেশ আছে, এমন বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস-আদালতকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, নরমে-গরমে নানাভাবে সতর্ক করার পরও মানুষের জীবনকে হুমকিতে ফেলার মতো অসচেতনতাকে ক্ষমা করার সুযোগ নেই। জনস্বার্থে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে।