শেয়ার বিজ ডেস্ক:রাশিয়ার ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার পর দেশটির অনেক নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হয়েছেন। বর্তমানে ইউক্রেনের এই নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে তেলক্ষেত্রে কাজের সন্ধান করছেন। খবর: ডেইলি সাবাহ।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের ঝাপোরঝিয়া থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন মাকসিম বুঞ্চুকোভ। যুদ্ধকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তার ভাষায়, এই অভিজ্ঞতা ভয়ানক। প্রাণ বাঁচাতে তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে প্রথমে লিভিভে আশ্রয় নেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে চলে আসেন। এখানে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক ইউক্রেনীয় বসবাস করছেন।
তার মতো আরও ১৬ ইউক্রেনীয় বর্তমানে ‘ইউনাইটিং ফর ইউক্রেন’ মানবিক কর্মসূচির আওতায় নর্থ ডাকোটা পেট্রোলিয়াম কাউন্সিল পরিচালিত ‘বাক্কেন গ্লোবাল রিক্রুটমেন্ট অব অয়েলফিল্ড ওয়ার্কারস’ প্রোগ্রামে কাজের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন ১২ জনের বেশি ইউক্রেনীয়। তারাও এ তেলক্ষেত্রে যোগ দেবেন। এ কর্মীদের মধ্যে কয়েকজন তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান, কয়েকজন দেশে ফিরতে চান।
বুঞ্চুকোভ বলেন, আমি স্ত্রী, সন্তান, পোষা কুকুর ও বিড়ালকে আনতে চাই।
বাক্কেন প্রোগ্রামের মানবিক ও কর্মসংস্থানের মিশন রয়েছে বলে জানান, এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রেন্ট স্যানফোর্ড। তিনি নর্থ ডাকোটার ওয়াটফোর্ড সিটির লেফটেন্যান্ট মেয়র (উপ-মেয়র) ছিলেন। তার সময়ে (২০১০-২০১৬) এখানের বাক্কেনে তেলকূপ খনন শুরু হয়।
এরপর এখান থেকে বিপুল পরিমাণে তেল উৎপাদন শুরু হয়। প্রয়োজন পড়ে অসংখ্য কর্মীর। এই কর্মশক্তির জন্য প্রথমে স্থানীয় অধিবাসীদের বাছাই করা হয়, যারা আগে অন্য কোনো তেলক্ষেত্রে কাজ করেছিলেন। তবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে কয়েক হাজার কর্মী বাক্কেন তেলক্ষেত্র ছেড়ে অন্য রাজ্য, এমনকি অন্য দেশে চলে যান।
মন্দা শেষ হওয়ার পর প্রযুক্তিগত সহায়তায় নতুন করে ড্রিলিং শুরু হয়। কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রন নেস বলেন, দলে দলে কর্মীরা উড়োজাহাজ, টেন ও গাড়িতে চড়ে কাজের জন্য এখানে আসতে শুরু করেন। তাদের বেশিরভাগ সরকারের মর্টগেজ, নিজেদের জীবন বা অন্য কিছু নিয়ে হতাশ ছিলেন এবং তারা নর্থ ডাকোটায় স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে ২০১৫ সালের অর্থনৈতিক ধীরগতি, পরে কভিড-১৯ মহামারি এবং অন্যান্য ঝামেলার কারণে আবার কর্মীরা তাদের নিজস্ব রাজ্যে ফিরে যান। গত ১০ মাস ধরে ভীষণ কর্মী সংকট চলছে বলে জানান নেস।
নেসের ধারণা, শুধু এ তেলক্ষেত্রে আরও আড়াই হাজার কর্মী দরকার। এখান থেকে প্রতিদিন ১ দশমিক ১ ব্যারেল তেল উৎপাদন হয়। নিয়োগদাতারা মাঝে মধ্যে এক বা একাধিক পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক ল ফার্ম জানিয়েছে, ‘ইউনাইটিং ফর ইউক্রেন’ চাইলে ইউক্রেন থেকে আরও কর্মী আনতে পারে। এখানের আবহাওয়া ও কৃষিজীবীদের সঙ্গে ইউক্রেনের অনেক মিল দেখা গেছে।
কোম্পানির পৃষ্ঠপোষক, মালিকপক্ষ, ব্যবস্থাপক এবং কর্মীরাও এখানে কর্মসংস্থানের জন্য ইউক্রেনীয়দের সাহায্য করতে চান। তাদের স্বাস্থ্যসেবা, সন্তানদের পড়ালেখা ও স্বল্প খরচে আবাসন সুবিধা দিতে চান তারা।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৬০ জন ইউক্রেনীয় নর্থ ডাকোটায় এসেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইউক্রেনীয়দের জন্য রাজ্যজুড়ে পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে প্রচুর আবেদন এসেছে। ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগে এ তেলক্ষেত্রে আরও ১০০ ইউক্রেনীয় কর্মী নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছরে এই সংখ্যা ৪০০ করা হবে বলেন নেস।
তেলক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোনো খাতে চাকরি করতে চাইলে শুরুতে ইউক্রেনীয়দের ঘণ্টায় ২০ ডলার দেয়া হবে এবং এ মজুরির হার দ্রুত বাড়ানো হবে। তারা চাইলে সুবিধাজনক সময়ে অন্য রাজ্যেও চলে যেতে পারবেন।