ওয়াল স্ট্রিটে পতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ পার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে সব স্টক একচেঞ্জের লেনদেন গত সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবসে নিন্মমুখী ছিল। সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও পতন ঠেকানো যায়নি। খবর: এপি।

শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে বন্ধের কারণে ওয়াল স্ট্রিটে গত সপ্তাহে চার দিন লেনদেন হয়। শেষ দিন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বৃদ্ধি পায় শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, এতে ৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে হয় ৪ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৪৯। এর আগে টানা তিন দিন এ সূচকের পতন হয়। আলোচ্য সপ্তাহে এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর ১ দশমিক ৩ শতাংশ পতন হয়।

ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের পয়েন্ট ৭৫ দশমিক ৮৬ বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এতে সূচক ৩৪ হাজার ৫৭৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করে। নাসডাক কম্পোজিটের পয়েন্ট ১২ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ হাজার ৭৬১ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে অবস্থান করে।

সপ্তাহের হিসেবে উল্লিখিত সব সূচকে পতন ঘটে। এর অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের দীর্ঘ মেয়াদে নীতি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, নীতি সুদহারের প্রভাব আগামী বছরেও থাকবে। তাদের ধারণা, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি আরও অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে এতেও কোনো শুক্রবারে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা যায়নি।

স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন ব্র্যান্ডের সূচক বৃদ্ধি পায় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। এই অস্ত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি গত ত্রৈমাসিকে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি মুনাফা করে। চলতি গ্রীষ্ম তাদের জন্য আশানুরূপ না হলেও গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি বিক্রি বেড়েছে।

ক্রোগারের শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ। আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের শেয়ারে উল্লম্ফন দেখা গেছে। শেষ প্রান্তিকে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের চেয়ে এই মুুদিপণ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থানে থাকলেও এর রাজস্ব আয় তুলনামূলক কমেছে। সম্প্রতি ক্রোগার আরেক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যালবার্টসনসের সঙ্গে মিলিতভাবে চারশ’র বেশি আউটলেট ও অন্যান্য সম্পদ ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ১৯০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী মাসে এই দুই প্রতিষ্ঠান একীভূত হতে পারে। মূলত ওয়ালমার্ট, আমাজনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই দুই প্রতিষ্ঠান এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে বিশ্ববাজার বেশ ব্যস্ত সময় পার করবে। আগামী বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি নিয়ে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হবে। গত বছরে জুনে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয় দেশটিতেÑ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এরপর অবশ্য আগস্টে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে তা আরও কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ২ শতাংশে। বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা গত মাসে ছিল ২ দশমিক ৯৭ এবং গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮ দশমিক ৫২। এত কিছুর পরও ফেডের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ। অর্থাৎ ফেড মূল্যস্ফীতির হার আরও কমানোর জন্য নীতি সুদহার বাড়াতে থাকবে। তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

উচ্চ সুদহার অর্থনীতির গতি ধীর করে দেবে এবং শ্রমবাজারে এর প্রভাব পড়বে। সবমিলিয়ে মূল্যস্ফীতি আগের অবস্থানেই থাকবে। কিন্তু গত দুই দশকে উচ্চ সুদহারের মারাত্মক প্রভাব দেখা গেছে। এরপরও ফেড সুদহার বাড়িয়েই চলবে বলে আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের।

ব্যাংক অব আমেরিকা তার আমানতকারী ও কৌশলবিদদের সঙ্গে আলোচনার পর বলেছে, তারা বিশ্বাস করে ফেড নীতি সুদহার বৃদ্ধির কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি তা অব্যাহত রাখার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নভেম্বরে আবার সুদহার বৃদ্ধি করা হবে বলে মনে করছে ব্যাংক অব আমেরিকা।