কোনো ব্যাংক থেকে একজন গ্রাহক ব্যাংকটির মোট পরিশোধিত মূলধনের কত শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন, সে বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অনেক ব্যাংকের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, তারা সে সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করেছে। আর এ ধরনের ঋণের খেলাপি হয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ঋণ বিতরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘১৩ প্রতিষ্ঠানের কাছেই অগ্রণী ব্যাংকের ৪৬ শতাংশ ঋণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ব্যাংকটি বড় গ্রাহকের ক্ষেত্রে মোট ঋণ পোর্টফোলিওর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে পারবে। কিন্তু ব্যাংকটির বড় ঋণের হার ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ গ্রাহককে ব্যাংকটি মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের লঙ্ঘন।
এমন নিয়ম লঙ্ঘন যে কেবল অগ্রণী ব্যাংকের ক্ষেত্রেই সংঘটিত হয়েছে তা নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকেও এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংকে ২০১২ সালে সংঘটিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও মানা হয়নি যথাযথ নিয়ম-কানুন। এছাড়া অ্যাননটেক্সকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও জনতা ব্যাংক লিমিটেড নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। নিয়ম লঙ্ঘনের এ প্রবণতা বেসরকারি ব্যাংকগুলোয়ও সংক্রমিত হয়েছে। বিশেষ করে ফার্মার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋণ কেলেঙ্কারি সবার জানা আছে। যথেচ্ছভাবে ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংকটির অস্তিত্বই একসময় সংকটের মুখে পড়ে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন ও নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাংকটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকটি এখনও গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এমনকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাত জলবায়ু তহবিলের অর্থ গচ্ছিত ছিল ফার্মার্স ব্যাংকে। সে অর্থও অপব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকটির কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর দায়িত্বশীল কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে একটি ব্যাংকের কী ধরনের পরিণতি হতে পারে, সে বিষয়ে চাক্ষুষ উদাহরণ হচ্ছে ফার্মার্স ব্যাংক।
দেশের আর কোনো ব্যাংকের যাতে এ ধরনের পরিণতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা আবশ্যক। সেজন্য ব্যাংকগুলো যাতে আগ্রাসী ঋণ বিতরণের মাধ্যমে আমানকারীদের সঞ্চয়কে ঝুঁকির মুখে না ফেলে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত তাদের তদারকি কার্যক্রম শক্তিশালী করা এবং যে কোনো ধরনের প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি খেয়াল রাখবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।