শিশুখাদ্য সহজলভ্য করতে উদ্যোগ নিন

শিশুরা দেশ ও জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বিকাশ হয়। যে পেশায় থাকুক না কেন, কর্মজীবী ও শ্রমজীবীদের সুস্থ ও সবল থাকতে হয়। শরীর গঠনের জন্য শিশুর শৈশব থেকেই যতœবান হতে হয় অভিভাবকদের, থাকতে হয় সচেতন। শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয়। তাই শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি তাকে ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার দিতে হয়। এ সময় প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য শিশুকে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার আমিষ, শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে। আয়রনের অভাবে শিশু রক্তস্বল্পতায় ভোগে। রক্তস্বল্পতার ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া শিশুর ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, পড়ালেখা ও খেলাধুলায় অমনোযোগী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের অপুষ্টিজনিত ঘাটতি পূরণে ও রক্তস্বল্পতা দূর করতে (মায়ের দুধের পাশাপাশি) আয়রন, ফলিক এসিড, জিংক, ভিটামিন এ এবং সি-সমৃদ্ধ শিশুখাদ্য খাওয়াতে হবে।

দুধসহ শিশুখাদ্যের দাম সাদারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় মধ্যে থাকলেই শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার ব্যবস্থা করতে পারেন বাবা-মা। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাড়তি দাম দিয়েও মিলছে না শিশুখাদ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন। তথ্যমতে, বেশিরভাগ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মিলছে না শিশুখাদ্য, কয়েক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে শিশুর জন্য অভিভাবকরা বেশি দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী শিশুর জন্য দুধ কিনতে পারছেন না। অনলাইনে চড়া দামে অর্ডার দিয়ে কয়েক দিন অপেক্ষা করেও মিলছে না দুধ। সন্তানের খাবারের চাহিদা মেটাতে বাবা-মা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই এসব পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে আদরের সন্তানের পুষ্টিতে টান পড়ছে।

দেশে যেসব শিশুখাদ্য বিক্রি হয়, সেগুলোর বেশিরভাগই আমদানি করে সরবরাহ করা হয়। কভিডকালে আমদানি বন্ধ হওয়ায় দাম বাড়তে শুরু করে। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। সে সময় মূল্য ফের কিছুটা বাড়ানো হয়। এরপর ডলার সংকট ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বাড়ায় শিশুখাদ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। কিন্তু যে হারে মূল্যবৃদ্ধির কথা, কারসাজিতে এরও বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত বেশিরভাগ পরিবার সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই শিশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে দীর্ঘ মেয়াদে শিশুদের পুষ্টিঘাটতি তৈরি হতে পারে।

শিশুর শরীর গঠনের প্রধান উপাদান আমিষ। শিশুকে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত আমিষজাতীয় খাদ্য না খাওয়ালে তারা পুষ্টিহীন প্রজš§ হিসেবে গড়ে উঠবে। পাঁচ বছরের বেশি বয়সের শিশুর জন্য দিনে অন্তত দুবার দুধ বা দুধ-জাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিত। কিন্তু সেজন্য শিশুখাদ্য সুলভ করতে হবে। শিশুখাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কেউ যেন অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতার দুর্ভোগ বাড়াতে না পারে, সে লক্ষ্যে শিশুখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।