যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের ধর্মঘট শেষ, হয়নি সমঝোতা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বেতন বৃদ্ধি ও কর্মী সংকট নিরসনের দাবিতে গতকাল শনিবার ধর্মঘটের শেষ দিনেও যুক্তরাষ্ট্রের হেলথকেয়ার কোম্পানি কাইজার পার্মানেন্টের স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো ধরনের সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। খবর: এবিসি নিউজ।

ক্যালিফোর্নিয়া ও ভার্জিনিয়াসহ কয়েকটি রাজ্যে হওয়া তিন দিনের ধর্মঘট শনিবার সকাল ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। ধর্মঘট শেষে কাইজার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় শ্রমিকরা আবার নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত বুধবার আলোচনা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য কোনো সভা নির্ধারিত হয়নি।

কাইজার কর্তৃপক্ষ কভিড-১৯ মহামারির সময় কর্মিসংকট উপেক্ষা করার কারণে ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, কলোরাডো, ওরেগন ও ওয়াশিংটনে তিন দিনের এ ধর্মঘট করেন কর্মীরা। ভার্জিনিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রায় ১৮০ শ্রমিক পিকেট লাইনে অংশ নেন। বিক্ষোভে ভোকেশনাল নার্স, হোম হেলথ এইডস ও আল্ট্রাসাউন্ড সোনোগ্রাফারদের পাশাপাশি রেডিওলজি, এক্স-রে, সার্জিক্যাল, ফার্মেসি ও জরুরি বিভাগের টেকনিশিয়ানরা অংশ নেন। তবে চিকিৎসকরা এতে অংশ নেননি। কাইজার পারমানেন্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিকেটিং চলার সময় জরুরি ব্যবস্থাসহ এর হাসপাতালগুলো খোলা ছিল। শূন্য কর্মস্থান পূরণ করতে হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মী নিয়ে আসা হয়। তবে ধর্মঘটের কারণে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দেরি হয়।

কাইজার পারমানেন্ট ইউনিয়ন জোট জানিয়েছে, জনগণের সমর্থনের জন্য সবার সামনে সমস্যাগুলো তুলে ধরাই ছিল তাদের এই ধর্মঘটের লক্ষ্য। জোটের নির্বাহী পরিচালক ক্যারোলিন লুকাস বলেন, কোনো স্বাস্থ্যকর্মীই ধর্মঘটে যেতে চান না। আমি আশা করি গত কয়েক দিন এই সমস্যার তীব্রতাকে অনুধাবন করতে সাহায্য করেছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে বলেছে, কাজ বন্ধ রাখার কারণে নতুন কর্মীদের নিয়োগ পেতে দেরি হতে পারে। কাইজারের মুখপাত্র হিলারি কস্টা জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব সমাঝোতায় আসার কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত আগস্টে কাইজার শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিয়নগুলো ঘণ্টায় ২৫ ডলার ন্যূনতম মজুরি, প্রথম দুই বছরে বার্ষিক সাত শতাংশ এবং পরের দুই বছরে বার্ষিক ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানায়। অন্যদিকে কায়সার ঘণ্টাপ্রতি ২১ ডলার থেকে ২৩ ডলার সর্বনিন্ম মজুরির প্রস্তাব দেয়।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা আরও ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের কাজ শেষ করেছে। ২০২২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানে ৫১ হাজার কর্মী নিয়োগ

দেয়া হয়েছে।

ইউনিয়নের সদস্যরা বলেছেন, কম কর্মী নিয়োগের ফলে কর্তৃপক্ষের মুনাফা বাড়ছে, কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে রোগীদের। লুকাস বলেন, উভয় পক্ষ বেশ কয়েকটি অস্থায়ী চুক্তি করেছে। দীর্ঘমেয়াদি কর্মিপরিকল্পনা ও মজুরি বৃদ্ধির মতো বড় ক্ষেত্রগুলোয় কোনো পরিবর্তন হয়নি। ৮৫ হাজার কর্মীর জোটটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। মহামারির আগে ২০১৯ সালে চুক্তি নিয়ে কর্মীদের শেষ আলোচনা হয়েছিল।

কাইজার পারমানেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা। দেশব্যাপী এর ৩৯টি হাসপাতাল রয়েছে। ওকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এ অলাভজনক সংস্থা প্রায় ১৩ মিলিয়ন বা এক কোটি ৩০ লাখ ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে।

এই ধর্মঘট চলতি বছরে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সংগঠিত সবশেষ প্রতিবাদ।

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে নতুন একটি বিল পাঠানো হয়েছে, যাতে পরবর্তী দশকে রাজ্যের চার লাখ ৫৫ হাজার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ২৫ ডলারের প্রস্তাব দেয়া হয়। গভর্নর ১৪ অক্টোবরের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে কাইজার বলেছে, সংস্থাটি বিপুল ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও শ্রমঘাটতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এমনকি পুরো সেক্টর একই চ্যালেঞ্জে রয়েছে। হাসপাতালগুলো উচ্চ শ্রমখরচ ও কর্মীদের ঘাটতি নিয়ে লড়াই করছে। তাদের বেশিরভাগ রাজস্ব স্থির, মেডিকেয়ার এবং মেডিকেডের মতো সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম থেকে আসছে। মজুরি বৃদ্ধি শুধু ভলিউম বাড়ানোর মাধ্যমে সম্ভব, যা বেশ কঠিন।