সুবিধাবঞ্চিতদের চাহিদা পূরণ করুন

রাত পোহালেই পূর্ব আকাশে সূর্যের দেখা মেলে; তবে তা সবার জন্য সমানভাবে উদিত হয় না। ভোর হলেই রাতের নিস্তব্ধতাকে উপেক্ষা করে শহুরে জীবনের বিচিত্র দৃশ্য ভেসে উঠে, তবে অধিকাংশ মানুষই তা দেখেও না দেখার অভিনয় করে বলে এটা উল্লেখযোগ্যভাবে দৃষ্টিগোচর হয় না। এই বৈচিত্র্য দেখার জন্য থিসিসের প্রয়োজন হয় না, শুধু বাহ্যিক চোখের পাশাপাশি অন্তর্দৃষ্টি খুললেই তা আমরা দেখতে পাই। খেয়াল করে দেখবেন, ঢাকা সদরঘাটের কাছেই আছে বাহাদুর শাহ পার্ক; যা ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ আবার কুৎসিত। এই দ্বৈত নীতি এখনও পর্যন্ত বলবৎ আছে এই পার্কসহ সারা শহরে, সমগ্র দেশে। সারাদিন ভিক্ষা করে, দশ টাকার ফুল বিক্রি করে কিংবা উপযুক্ত যত্নের অভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কোনোভাবে এক বেলা খাবার পেল তো খেয়ে, না পেল তো না খেয়েই এই পার্কে ঘুমিয়ে থাকে কত ছেলে-বুড়ো! বাস্তুচ্যুত এসব তাজা প্রাণকে এই সমাজ আশ্রয় না দিলেও রাস্তার পাশের ফুটপাত কিংবা এরকম শত শত পার্ক তাদের আপন করে নিয়েছে মাতৃস্নেহে, ফিরিয়ে দিয়েছে একটুখানি ঘুমের অধিকার। কেউ কেউ আবার রাস্তার পাশেই সংকীর্ণ জায়গায় প্রশস্ত মন নিয়ে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করে নিয়েছে সুবিশাল একতলা ভবন। যার নিচেই পুষ্টিহীনতায় শুকিয়ে যাওয়া শিশুকে নিয়ে বসবাস করছে নিরুপায় মা, কী সুখের সংসার তাদের! অথচ তাদের এই করুণ অবস্থা দেখে আমাদের পাথরের মতো কঠিন পদার্থের হƒদয়ে একটুও কম্পন সৃষ্টি হয় না। অথচ মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত শ্রেণির ভদ্রলোকরা নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতির কথা ভেবে এসব পার্কেই আসেন শারীরিক কসরত করার জন্য; তবে প্রবল আত্মকেন্দ্রিকতায় বাস্তুহারা পথিকদের এই দুর্দশা তাদের রঙিন চশমার ঝলকানি ভেদ করে তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। যান্ত্রিকতার রোষানলে পরে আমরা ভুলেই গিয়েছি যে সুবিধাবঞ্চিতদের তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো ফিরিয়ে দেয়া উচিত। আইনিভাবে আমরা কেউ এজন্য দায়বদ্ধ নই, তবে ন্যাচরাল ল’ অনুযায়ী নৈতিকতার কাঠগড়ায় আমাদের বিবেক এখানে অপরাধী সাব্যস্ত হয়।

তানজিউর রহমান

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়