যানবাহনে আগুন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগে করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে ভীতির রাজত্ব কায়েমের অশুভ উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নৈরাজ্যে লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী কর্মীরা। তারা গণপরিবহনে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ করছে আর নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বেশিরভাগ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বা পুলিশ চেকপোস্টের কাছাকাছি ঘটছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

রিজভী বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রতিরোধে কিংবা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে, দেশজুড়ে চলমান নাশকতায় ক্ষমতাসীন অপশক্তি জড়িত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, কীভাবে পুলিশ বা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা বাসে আগুন দেয়ার জন্য দায়ী।

তিনি বলেন, দেশের সবখানে পুলিশ বা র?্যাবের শত শত পেট্রোল টিম এবং বিজিবির শত শত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এই নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও বিরোধী দলের সদস্য কোনো প্রকার সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগের কাজে লিপ্ত হবে, এই দাবি সর্বত্রই হাস্যকর। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হয়তো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যেন তারা নিশ্চিন্তে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে পারে ও রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, তাদের এসব কর্মকাণ্ড বারবার প্রমাণিত হয়েছে, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছেÑকীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বাসে অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয় আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী নেতাকর্মীরা। ২০১৪ সালে ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুই ছাত্রলীগ সদস্য ককটেল ও পেট্রোলবোমাসহ আটক হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় পেট্রোলবোমাসহ গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে পুলিশ দুই যুবলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছিল।

রিজভী বলেন, ২০১৪ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল দিয়ে আগুন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যম মারফত জানা যায়। সেখানে আগুনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ট্রেন ও বাসে আগুন দিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের ওপর হামলা করে মানুষ হত্যা করেছিল। শেরাটনের সামনে গান পাউডার মেরে বাসে আগুন দেয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ-বিভাজিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে।

এই বিএনপি নেতা বলেন, মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানোর যে বীভৎস রাজনীতি আওয়ামী লীগ লালন করছে, আমরা তা ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ৪৭৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিভিন্ন মামলায় এক হাজার ৭২০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, আগামীকাল (আজ) ভোর ৬টা থেকে যে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, সেই কর্মসূচিতে দেশের জনগণ, দলের নেতাকর্মী, সমমনা জোট ও দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে অবরোধ কর্মসূচিকে সার্থক করবেন ও সাফল্যমণ্ডিত করবেন। এই অবরোধ কর্মসূচি আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ।

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বুধবার ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো টানা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। গত রোববার (১৯ নভেম্বর) থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পর এক দিন বিরতি দিয়ে ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।