শেয়ার বিজ ডেস্ক: সরকার যেন ইচ্ছামতো ঋণ নিতে না পারে, সেজন্য ২০০৯ সালে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা চালু করে জার্মানি। কভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত তিন বছর এ সীমা তুলে দেয়া হয়েছিল। এ বছরও একই বিষয়ে একমত হলেন জার্মানির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। খবর: ডয়চে ভেলে।
গত সোমবার তারা একটি সম্পূরক বাজেটে একমত হয়েছেন। সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে এটি পাস হতে হবে। সে লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার বুন্ডেসটাগে বক্তব্য দেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। এরপর সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়।
ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বিষয়টি জার্মানির সংবিধানে রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাজেট ঘাটতি জিডিপির শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। তাই সরকার যখন এবার করোনার জন্য বরাদ্দ দেয়া অব্যবহƒত অর্থ (৬০ বিলিয়ন ইউরো) জলবায়ু খাতে খরচ করা শুরু করেছিল, তখন আপত্তি করেছিল বিরোধী দল সিডিইউ। তারা সাংবিধানিক আদালতকে বিষয়টি জানিয়েছিল। বিশেষ করে বিদ্যুৎচালিত পরিবহন ও ভবনগুলোকে জ্বালানিসাশ্রয়ী করতে এই অর্থ ব্যয়ের কথা ছিল। তাই এ ধরনের তহবিলের ক্ষেত্রে ঋণের সাধারণ নিয়মই কার্যকর হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ নভেম্বর আদালত জানান, সরকার ওই অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করতে পারবে না। রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো একটি বছরের জন্য বরাদ্দ অর্থ সরকার পরবর্তী বছরে অন্য খাতে ব্যয় করতে পারে না। আদালতের এই রায় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও তার সরকারের জন্য বড় আঘাত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। অথচ সরকার এরই মধ্যে জ্বালানি সংকট সমাধানে নেয়া পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ও বন্যার্তদের সহায়তায় ৪৫ বিলিয়ন ইউরো খরচ করে ফেলেছে। এই অর্থ সম্পূরক বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই রায়ের ফলে রাজনৈতিকভাবেও সংকটে পড়েছে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সিডিইউ’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত এই রায় দিয়েছেন। নির্বাচনের দুই বছর আগে জোট সরকারের জন্য এটি বড় রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কীভাবে সরকার আগামী বছরের ব্যয় সামাল দেবে, তা নিয়ে জোটের সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে মতবিরোধ। এসপিডি চায় কর বাড়াতে। পাশাপাশি ২০২৪ সালকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ঋণসীমা বাড়ানোরও মত দিচ্ছেন দলটির কোনো কোনো নেতা।
সংবিধানে বলা আছে, জরুরি অবস্থা কিংবা আর্থিক মন্দার সময় ঋণের ঊর্ধ্বসীমা আইনের ব্যত্যয় ঘটানো যেতে পারে। তাই করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে গত তিন বছর ঋণের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেয়া হয়েছিল।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার গত সপ্তাহে বলেছিলেন, সরকার যা খরচ করছে তা সংবিধানের আওতায় রাখতে তিনি এ বছরটিকে ‘জরুরি’ বলে ঘোষণা করবেন। লিন্ডনার তভন সরকারের নতুন নীতি ঘোষণা করেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের বাকি সময়ে সরকারের প্রায় পুরো বাজেট ব্যয় স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি। প্রকৃতপক্ষে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালতের নাটকীয় এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নিতে হয় সরকারকে।
সরকারের এক মুখপাত্র মনে করছেন, সম্পূরক বাজেটটির আইনি ভিত্তি শক্ত। জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে চতুর্থবারের মতো ঋণের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেয়ার প্রয়োজন পড়েছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালকেও আমরা জরুরি মনে করছি, কারণ ২০২২ সাল যে কারণে জরুরি ছিল, সেই একই কারণ এ বছরের জন্যও প্রযোজ্য।