বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গত কয়েক বছর ধরেই দ্রুত বাড়ছে। তবে গত অর্থবছর এ বৃদ্ধির হার অনেকটাই কমে এসেছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরেই ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রার দর মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। যদিও গত দুই অর্থবছর এ দর অনেকটাই কমেছে। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ছয় বছরে ডলারের হিসাবে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার বা ৭৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অথচ এ সময় টাকার হিসাবে বিদেশি ঋণ বেড়েছে পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ১২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছর ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৭৩ পয়সা। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছর ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ২২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ডলারের হিসাবে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ টাকার হিসাবে তা বেড়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছর বিদেশি ঋণের স্থিতি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছর ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর ডলারের হিসাবে বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। আর টাকার হিসাবে বেড়েছে ১০ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছর বিদেশি ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়। ওই অর্থবছর শেষে এ স্থিতি অনেকখানি বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছর ডলারের বিনিময় হার কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮৪ টাকা ৮১ পয়সা। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ছয় লাখ ৯২ হাজার ২৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর ডলারের হিসাবে বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর টাকার হিসাবে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
পরের অর্থবছরও বিদেশি ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে ওই অর্থবছর বিনিময় হারে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। এতে ডলারের তুলনায় দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছর ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় আট লাখ ৯১ হাজার ৯৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে ওই অর্থবছর ডলারের হিসাবে বিদেশি ঋণের ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও, টাকার হিসাবে তা ছিল ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর বিদেশি ঋণের স্থিতি সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ১০৬ টাকা। এতে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। ফলে গত অর্থবছর ডলারের হিসাবে বিদেশি ঋণ বেড়েছে মাত্র তিন দশমিক ৭ শতাংশ। তবে টাকার হিসাবে তা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ।