লক্ষীপুরে বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ বাড়ছে

 

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষীপুর: বাণিজ্যিকভাবে লক্ষীপুরে আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি ও ভালো দাম পাওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে আখ চাষে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত আখ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৭০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৩০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ১০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে।

জানা যায়, কৃষকরা আখ চাষের জন্য নীল চাষের ক্ষেত ও পাটের জমিই বেছে নেন। মূলত চিনিকলে সরবরাহের জন্যই আখ চাষ শুরু হয়। ভালো দামে নগদ টাকায় বিক্রি করা যেত বলে কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহী ছিলেন। তখন গরুচালিত দেশীয় মাড়াই কল দিয়ে গুড় তৈরি করা হতো। একসময় কৃষকের আগ্রহ কমে গেলেও ফের বাড়ছে আখ চাষের কদর।

সদর উপজেলার মান্দারী এলাকার কয়েকজন চাষি জানান, আখ চাষে সার ও কীটনাশক তেমন ব্যবহার করতে হয় না। অল্প ব্যয়ে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় কৃষকরা আখ চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মূলত আশ্বিন মাসে নতুন করে আখ চাষ শুরু করা হলেও ভালো ফলনের জন্য কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে চারা রোপণ করা হয়। প্রথমে জমির মাটি এক ফুট গর্ত করে পাশে তিন ফুট রেখে মাটির সঙ্গে বিভিন্ন সার মিশিয়ে ভালোমতো চেলে আখের চারা রোপণ করা হয়। পরের বছর ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে আখ বিক্রির উপযুক্ত হয়। এখানকার কৃষকরা এ বছর ২০৮ ও সুরেশ্বরÑএ দুটি জাতের আখের আবাদ করেন। আখ চাষ করে ব্যাপক ফলন পাওয়ায় তাদের মাঝে আখ চাষের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নতুন চাষিরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখ আবাদে খরচ কম হওয়ায় আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষি। এছাড়া জেলায় আখচাষিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তারা।

সদর উপজেলার চরভুতা গ্রামের চাষি মো. আবু ছিদ্দিক জানান, বর্ষজীবী ফসল আখ চাষ করা হলেও উৎপাদনের তুলনায় দাম কম পেলে কৃষকদের আগ্রহ কমে যায়। তবে চলতি মৌসুমে আখের ন্যায্য দাম পেয়ে তিনি খুশি।

তিনি জানান, গত মৌসুমে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতক জমিতে তিনি আখ চাষ করেন। চলতি মৌসুমে ভাদ্র মাসের শেষের দিকে তিনি বিক্রি শুরু করেন। এক সপ্তাহে তিনি পাইকারি ও খুচরা ৫০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। একটি আখের চারা থেকে নতুন নতুন চারা গজিয়ে আখ ক্ষেত ভরে যায় বলেও তিনি জানান।

একই গ্রামের আখচাষি মনির হোসেন জানান, সুরেশ্বর জাতের আখ মিষ্টি হওয়ায় এবং বাজারে এর চাহিদা থাকায় তিনি গত বছর ৪৮ শতক জমিতে আখের আবাদ করেন। জমি তৈরি, চারা রোপণ, কীটনাশক ও পরিচর্যা করতে তার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আখের ভালো ফলন হওয়ায় সাত-আট দিনে তিনি ৫০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেন। আকারভেদে পাইকারি ১০০ আখ তিনি বিক্রি করেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। তার জমিতে গত মৌসুমের চাষকৃত এখনও অর্ধেকের বেশি আখ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন জানান, লক্ষীপুরে চাষিরা সাধারণত দুই জাতের আখ চাষ করেন। এখানকার মাটির গুণগতমান খুবই ভালো। আর সময়মতো আখের চারা রোপণ করতে পারলে ফলন অবশ্যই ভালো হয়।