ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে এশিয়ার বাজারে বিশৃঙ্খলা

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে থেকে রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা আসার পর এশিয়ার বাজারে রকেট গতিতে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। কাঠমান্ডু থেকে কলম্বো কিংবা ঢাকা; সব জায়গায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। খবর: ইকোনমিকস টাইমস।

চলতি বছর ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়েছে। ফলে তিন মাসে সেখানে পণ্যটির দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাওয়ায় লাগাম টানতে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারত। তারা দেশীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যপণ্যটির রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যে নিষেধাজ্ঞা আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে আর তুলে নেয়া হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের চাহিদার ঘটাতি পূরণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে।

ব্যবসায়ীদের হিসাব মতে, এশিয়ার দেশগুলোর আমদানি করা পেঁয়াজের অর্ধেকের বেশির ভাগ জোগান আসে ভারত থেকে। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন ও মিসর।

গত অর্থবছরেও (৩১ মার্চ পর্যন্ত) ভারত রেকর্ড ২৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে প্রায় সাত লাখ টন পেঁয়াজ গেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। প্রসঙ্গত পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।

নেপালের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ। নেপাল তাদের পেঁয়াজের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে। হিমালয়ের দেশটি এখন চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা ভাবছে। সেইসঙ্গে ভারতকে অনুরোধ করেছে, যেন তাদের জন্য নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম ভাবা এবং নেপালে পেঁয়াজ রপ্তানি করার অনুমতি দেয়া হয়।

যদি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদে অব্যাহত থাকে তবে বাকি রপ্তানিকারক দেশগুলোর ভাণ্ডারেও টান পড়বে। এমনিতেই ভারত বাজার থেকে সরে যাওয়ায় চীন, ইরান, পাকিস্তান ও তুরস্কের মতো পেঁয়াজ রপ্তানিকারক বাকি দেশগুলোয় পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।

অন্যদিকে, পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় ভারতের বাজারে মাত্র এক সপ্তাহে সবজিটির দাম ২০ শতাংশ কমে গেছে। নতুন পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমও আসন্ন। তাই শিগগির দেশের বাজারে আরও পেঁয়াজ ঢুকবে এবং দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজের জোগান সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছলে ভারতের আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করে দেশটির ব্যবসায়ীরা।

তবে নির্বাচনের আগে মোদি সরকার সেটা করবে কি না তা নিয়ে মুম্বাইভিত্তিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে মোদি এখন দেশের জনগণকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। জনগণকে খুশি রাখতে তিনি দেশীয় বাজারে কঠোরভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে করতে চাইছেন।

তবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত দেশটির কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতিতে ফেলেছে। অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন গুজরাট কংগ্রেসের সভাপতি শক্তিসিংহ গোহিল। তার অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত কেবল মজুতদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদেরই সাহায্য করছে।

গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের চাষিদের কাছে পেঁয়াজ অন্যতম প্রধান শীতকালীন ফসল উল্লেখ করে শক্তিসিংহ বলেন, সরকার যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে না চায়, তাহলে অবশ্যই কৃষকদের আশ্বাস দিতে হবে যে, তারা নিষেধাজ্ঞার আগের দামে পেঁয়াজ সংগ্রহ করবে।

এরই মধ্যে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছেন দেশটির বিভিন্ন জেলার কৃষকরা। মহারাষ্ট্রের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা নাসিকে কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এবং অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা আগেই পেঁয়াজ বিক্রির অর্ডার নিয়েছিলেন এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে বড় ক্ষতিতে পড়তে হবে।

কৃষকদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে নিলাম বাতিল করেছে সোলাপুর এপিএমসি (কৃষিপণ্য বাজার কমিটি)। এর ফলে সেখানেও বেচাকেনা বিঘ্নিত হচ্ছে। সৌরাষ্ট্রের কৃষকরাও পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেছেন।  গোন্ডল মার্কেট ইয়ার্ডে তুমুল বিক্ষোভ ও নিলাম বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটেছে। কৃষকরা পেঁয়াজ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।