জাতীয় পার্টি ভাঙার পরিস্থিতি দেখছেন না জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম দিয়ে ও তার আদর্শ ধারণ করে আরও ১০টি দল কেউ করতে পারে, তবে জাতীয় পার্টিকে ভেঙে আরেকটি দল করার মতো পরিস্থিতি দেখছেন না জিএম কাদের।

গতকাল শনিবার দুপুরে বনানীতে দলের কার্যালয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘তবে একটা জিনিস আমি বলতে চাই, আমাদের দলের ব্যাপারে মানুষের উপলব্ধি ভালো না।

দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপনেতা এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ নির্বাচিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টি এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।

চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দেন গত ২৮ জানুয়ারি। এর পাঁচ দিনের মধ্যে ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘণ্টা দেড়েকের জন্য দখলে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা।

নির্বাচনের পর রওশনের অনুসারীদের তৎপর হওয়া এবং জিএম কাদের ও চুন্নুর ওপর ক্ষুব্ধ আরেকটি অংশের পদত্যাগের মধ্যে জাতীয় পার্টির বিভক্তি আবার সামনে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ বিষয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অনেকে যেমন বলছেন, আমাদের দল ভাগ হয়ে যাবে। দল ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে আমি দেখি না। আরও একটা দল গঠন করতে পারেন, এরশাদ সাহেবের নাম দিয়ে, তার আদর্শ নিয়ে আরও ১০টা দল গঠন করতে পারেন। নতুনভাবে দল গঠন করার প্রক্রিয়া আছে। এরপর সেই দলটি নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া আছে। সেটা করে যে কোনো লোক করতে পারেন। আমরা যে কাঠামোতে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে ভেঙে নিয়ে নতুন করে দল গঠন করার এখনও সেই পরিবেশ বা পরিস্থিতি, সম্ভাবনা আমার চোখে পড়ছে না বা আমি দেখছি না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে ফাইট করে গেছি, সব ঠিক আছে। উনারা শুধু নৌকাটা তুলে নিয়েছিলেন। কেননা উনারা বলেছিলেন, দলীয়করণের মাধ্যমে যে নির্বাচন কুলষিত হয় বা দলীয়করণের কারণে বিভিন্নভাবে যে নিয়ম-কানুনগুলোকে ভঙ্গ করা হয়, সেটার জন্য উনাদের প্রতীক বা প্রার্থী না থাকলে সহজ হবে। কিন্তু উনারা প্রার্থী দিয়েছিলেন, বেশিরভাগ জায়গায় এবং প্রার্থীর সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে সমানভাবে। যাই হোক, এটার মধ্যে পরনির্ভরশীলতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।’

জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের গবেষক ও সাহিত্যিক মহিউদ্দিন আহমেদ। তার একটা সাক্ষাৎকারে আমাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, আমরা পরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর ফলে এ রকম দল থাকার কী দরকার! আরেক দল যদি তাকে নিয়ন্ত্রণই করে, তাহলে সে দলের অর্থ কী এটা আংশিক সঠিক। আমরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এটা পারশিয়ালি কারেক্ট; আমরা চেষ্টা করছি বেরিয়ে আসার জন্য।’

জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না যে, দল ভাঙবে কিন্তু দলের মধ্যে সংশোধন হওয়া দরকার আছে। কঠোর সংশোধন যদি আমরা করতে না পারি, সামনের দিকে দল ভাঙবে না, দল টিকবে না। দলের অস্তিত্বের মূল্য জনগণের কাছে থাকবে না। দলকে মানুষ ভালোবাসবে না, দলের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না, মানুষ মনে করবে না দল তাদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। হয়তো মনে করবে কিছু নেতা-নেত্রীদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দলটি ব্যবহƒত হচ্ছে। তাহলে জনগণের দল হবে না, জনগণের দল ছাড়া দল টিকবে না।’