আজকের দিনে

 

কবি, অনুবাদক, সংস্কৃতিকর্মী, সংগঠক ও শিক্ষাবিদ সানাউল হকের (১৯২৪-১৯৯৩) মৃত্যুদিবস আজ। তিনি ১৯২৪ সালের ২৩ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চাউরা গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আল মামুন সানাউল হক। মা সৈয়দা হোসাইনী বেগম ও বাবা জহুরুল হক।

সানাউল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স (অর্থনীতি) ও ১৯৪৫ সালে এমএ পাস করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে সানাউল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি একজন আমলা হিসেবে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সানাউল হকের সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় পারিবারিক আবহে। মামা কবি ও লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর (১৯০৩-১৯৫৬) সান্নিধ্য ও উৎসাহে সানাউল হক সাহিত্যচর্চায় অনুপ্রাণিত হন। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর চিন্তাভাবনা সানাউল হকের সাহিত্যচর্চাকে অনুপ্রাণিত করে। এর প্রতিফলন লক্ষ করা যায় সানাউল হকের কবিতায়, ভ্রমণবৃত্তান্তে, অনুবাদে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে।

চল্লিশের দশকের একজন খ্যাতিমান কবি হিসেবে সানাউল হক পরিচিতি লাভ করেন। কবিতার কতকগুলো বৈশিষ্ট্যÑশব্দ-ব্যবহার, ছন্দ-বিন্যাস ও উপমা-অলংকার নির্মাণ ছাড়াও তার কবিতায় প্রেমানুভূতি ও মানবতাবোধ ধ্বনিত হয়েছে। নদী ও মানুষের কবিতা, সম্ভবা অনন্য, সূর্য অন্যতর, বিচূর্ণ আর্শিতে, একটি ইচ্ছা সহস্র পালে, কাল সমকাল প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে সানাউল হক মানবজীবন ও জগতের ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন। সমকালের কবিমহলে ও পাঠকদের কাছে তা সমাদৃত হয়। বিশেষভাবে তার স্বদেশপ্রেমের কবিতাগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করে।

তার কবিতায় তার ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ করা যায়, যেখানে তিনি সমস্যা ও সম্ভাবনায় কখনও আশাহত, কখনও আনন্দিত। তার অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে পদ্মিনী শঙ্খিনী, প্রবাসে যখন, বিরাশির কবিতা, উত্তীর্ণ পঞ্চাশ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার ‘বন্দর থেকে বন্দরে’ শীর্ষক অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণকাহিনি বেশ খ্যাতিলাভ করেছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য সানাউল হক বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৪), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৫), লেখক সংঘ পুরস্কার (১৯৬৫), একুশে পদক (১৯৮৩) ও অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৫) লাভ করেন। সানাউল হক ১৯৯৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]