বিএল কলেজে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার চাই

 

গ্রন্থাগার পেশাজীবী, প্রকাশক ও পাঠকদের দীর্ঘদিনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বর্তমান সরকার। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতিবছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তাই এ দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর দেশব্যাপী দিবসটি ২০১৮ সাল থেকে পালন করে আসছে।

দেশের জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে, দেশব্যাপী এ দিবসটি উদ্যাপন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া গ্রন্থাগার পেশাজীবী এবং সাধারণ পাঠকদের উদ্দীপ্ত করতে এ দিনটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

বই সম্পর্কে অনেক মনীষীর বাণী প্রনিধাণযোগ্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে। বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই এবং বই। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম বলেন, একটি বই ১০০টি বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান। দেকার্তে বলেন, ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা। অস্কার ওয়াইলড বলেন, একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন, সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশেই বোঝা যায়।

এ বছরও নানা আয়োজনে দেশব্যাপী জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি পালিত হয়েছে আমাদের সরকারি ব্রজলাল কলেজেও। ৩৫ হাজার নিয়মিত শিক্ষার্থী নিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজলাল কলেজ। যেটি খুলনার দৌলতপুরের ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। কলেজটি ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনা বিভাগের সেরা কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতির পাশাপাশি নানা সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও কলেজের সুনাম রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ কলেজে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, সেখানে ৫০ হাজারের বেশি বই রয়েছে। যে বইগুলো শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে বসে কিংবা বাসায় নিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু বর্তমানে যুগের আধুনিকায়ন এবং কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় বইগুলো যথেষ্ট নয়।

তাছাড়া একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একাডেমিক বই তুলনামূলক কম সংযুক্ত হয়েছে। যে কারণে অনেক বইয়ের শেষ সংস্করণ কয়েক বছর আগের; যা পড়তে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া নিয়মানুযায়ী লাইব্রেরিতে বাইরে থেকে কোনো বই নিয়ে যেতে দেয়া হয় না; লেকচার শিট, কলম আর খাতা ছাড়া। এতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় নতুন সংস্করণের বই না পাওয়ায় কোনো কিছু পড়তে বা নোট করতে অসুবিধায় পড়ছে। ফলে তারা ধীরে ধীরে লাইব্রেরিতে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই এসব বিষয় বিবেচনা করে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারটির বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গ্রন্থাগারটি আরও সমৃদ্ধ করতে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে পাঠ্যবইসহ অন্যান্য বই সঙ্গে নিয়ে রিডিংরুমে পড়তে পারে তার সুব্যবস্থা করতে অধ্যক্ষ মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।

রিয়াদ হোসেন

শিক্ষার্থী, সরকারি ব্রজলাল কলেজ, খুলনা