শেয়ার বিজ ডেস্ক: লুফথহানসার কর্মীরা এক দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, যা ফ্রাংকফুর্টসহ জার্মানির বড় বিমানবন্দরগুলোকে ঝামেলায় ফেলতে পারে। কেননা ধর্মঘটের ফ্লাইট নিয়ে সংকটে রয়েছে জার্মানির পতাকাবাহী এই এয়ারলাইনস সংস্থাটি। খবর: ডয়চে ভেলে।
জার্মানির সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ সংস্থাটি লুফথহানসার কর্মীদের এক দিনব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্মীদের সংগঠন ভেরদি। জার্মানির স্থানীয় সময় আজ বুধবার এই ধর্মঘট হলে তার প্রভাব পড়বে মিউনিখ, হামবুর্গ, ড্যুসেলডর্ফ, বার্লিনসহ ফ্রাংকফুর্টে। ধর্মঘট শুরু হবে আজ ভোর ৪টায়, চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা বেজে ১০ মিনিট পর্যন্ত।
ভেরদি একটি বিবৃতিতে বলেছে, যেহেতু সব গ্রাউন্ড স্টাফ ও অন্য কর্মীদের এই ধর্মঘটে ডাকা হচ্ছে, ফলে অনেক ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব হবে। পরিকল্পিত এক লাখ ফ্লাইট বাতিল অথবা বিলম্বিত হতে পারে।
এদিকে ভেরদির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে লুফথহানসা। তাদের বক্তব্য, কোনো আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই এত বড় ধর্মঘট যুক্তিহীন।
বর্তমানে ভেরদি ও লুফথহানসার মধ্যে কর্মীদের দাবি নিয়ে একাধিক দফার আলোচনা চলছে। ভেরদিতে লুফথহানসার প্রায় ২৫ হাজার কর্মী রয়েছেন।
লুফথহানসার কর্তৃপক্ষ এর আগে বেতন বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা অপর্যাপ্ত বলে নাকচ করে ভেরদি। তাদের দাবি, মজুরি বাড়ুক ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, অথবা অন্তত প্রতি মাসে আগামী ১২ মাসের জন্য ৫০০ ইউরো বাড়ুক বেতন বা এককালীন তিন হাজার ইউরো দেয়া হোক।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এই দুই পক্ষের আবার আলোচনায় বসার কথা। এর আগে এমন ধর্মঘট লুফথহানসাকে কিছুটা চাপে ফেলবে। কারণ ভেরদি জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা দীর্ঘমেয়াদি ধর্মঘটের জন্যও প্রস্তুত, যদি লুফথহানসা ‘তাদের দাবি না মানে’।
অন্যদিকে লুফথহানসা নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ডিস্কাভার এয়ারলাইনসের পাইলটরা ধর্মঘটে থাকবেন। এ নিয়ে চলতি বছরে চতুর্থবার ধর্মঘট হলো জার্মানিতে। ভেরদির ডাকে এর আগে ধর্মঘটে যান গণপরিবহন ও রেলকর্মীরা।
জার্মানিতে মূল্যস্ফীতির ফলে সবকিছুর দাম বেড়েছে ব্যাপকহারে। বিভিন্ন খাতের কর্মীরা জীবনযাপন চালাতে হিমশিম খাওয়ায় ধর্মঘটের পথ বেছে নিচ্ছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মাসের প্রথম দিন জার্মানির ১১টি বড় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা ধর্মঘটে যান। ফলে এক হাজার ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্ব হয়েছে, যা ঝামেলায় ফেলে প্রায় দুই লাখ যাত্রীকে। তখন জার্মানির বিমানবন্দর সংস্থা এডিভি জানায়, ৩১ জানুয়ারি রাতে কোলন-বন বিমানবন্দরের রাতের শিফটে অনুপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। তখন থেকেই ধর্মঘটের সূচনা হয়। এরপর কর্মী ইউনিয়ন ভেরদির মুখপাত্র ও্যৎসে টারিম জানান, কোলন-বন বিমানবন্দরে ধর্মঘটে যান বিমানবন্দরের সব কর্মী।
তখন তিনি এ ধর্মঘটকে ‘সাফল্যের সঙ্গে শুরু হলো ধর্মঘট’ বলে মন্তব্য করেন। প্রায় ৮০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল হতে পারে বলেও জানান টারিম। ধর্মঘটের কারণে ফ্রাঙ্কফুর্ট, হামবুর্গ, বার্লিন, ব্রেমেন, লাইপজিশ, ড্যুসেলডর্ফ, কোলন, হানোফার, স্টুটগার্ট, এরফুর্ট ও ড্রেসডেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা কর্মবিরতিতে যান। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের সংস্থা বিডিএলএসের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনার পর কোনো সমাধান না হওয়ায় ধর্মঘটের ডাক দেয় কর্মী ইউনিয়ন ভেরদি। প্রতি ঘণ্টার মজুরিকে দুই দশমিক আট ইউরো বাড়ানোর দাবি করেন কর্মীরা। বিডিএলএসের মুখপাত্র বলেন, তারা চলতি বছরে চার শতাংশ ও আগামী বছরে তিন শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউনিয়নের দাবি মানতে পারছেন না।
ডয়চে ভেলের অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিবেদক ক্রিস্টি প্লাডসনের মতে, জার্মানিতে এখন বিভিন্ন খাতে শ্রমের মজুরি বাড়ানোর দাবি উঠছে। সঙ্গে উঠছে কাজের পরিবেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গও। এটা এখন এক ধরনের নতুন ট্রেন্ড।