শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্ভ্রমহানির দায় কে নেবে?

নারী যেন কেবলই এক ভোগের পণ্য। ঘরে-বাইরে এমনকি নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আর নিরাপদ নয় তারা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলের ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে অনেকের জানা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

সারাদেশ যেন আজ ধর্ষকদের অভয়াশ্রমে পরিণত হতে চলেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউসের হিসাব মতে, দেশে ২০২২ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ জন নারী। এর মধ্যে ৪৫০ জনকে আবার ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। একই সময়ে সারাদেশে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী। আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে ৬ মার্চ ‘মিডিয়া অ্যাডভোকেসি’ শীর্ষক এক সভায় এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।

শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মক্ষেত্রেই নয়, নারীরা অনিরাপদ গণপরিবহনেও। চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কয়েকবার।

ধর্ষণের মতো জঘন্য এবং পাশবিক কাজের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দায় দেশের তরুণদের। একটি বড় কারণ হলো ধর্মীয় এবং নৈতিক অনুশাসন মেনে না চলা। আমাদের চারপাশের সমাজে এখন কেবলই বিদ্রোহের গান। ধর্মীয় বা নৈতিক অনুশাসন মেনে চলা এখন ওল্ড ফ্যাশন।

আমাদের শিক্ষাক্রমেও এখন ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশাকে স্বাভাবিকীকরণ করার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। বলা হচ্ছে, পুরুষ বন্ধুর স্পর্শ হলো নিরাপদ স্পর্শ। অথচ জরিপেই উঠে এসেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটে পরিচিত এবং কাছের মানুষের দ্বারাই।

শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ একই অবস্থা। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রই যেন বদলে যায়। ঝোপের আড়ালে, খালি ক্লাসরুমে অথবা গ্রন্থাগারের কোনো এক কোনায় প্রায়ই কতিপয়কে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। কখনও ভিকারুননিসা নূন স্কুল কখনও ইডেন কলেজ আবার কখনও বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়Ñ এভাবে তালিকা দিনকে দিন বড় হচ্ছে। এই যদি হয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষার্থীদের অবস্থা, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজš§কে আমরা কেমন সমাজ উপহার দিচ্ছি তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

যা-ই হোক, শিক্ষার্থীরা যেমন ভাঙতে পারে, ঠিক তেমনই মানুষ গড়ার কারিগরও তারা। তারা যেমন নানারকম রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে ঠিক তেমনই সংঘবদ্ধভাবে তারাই একটা সুন্দর সমাজ তৈরি করে দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। ধর্ম এবং নৈতিকতা কখনোই শিক্ষা এবং জীবনাচরণের বাইরের কোনো বিষয় নয়। বরং এগুলোর সমন্বয় ঘটিয়েই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজাতে হবে। নয়তো শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়, কলঙ্কিত হবে গোটা জাতিই। কেবলই কিছু সময়ের অপেক্ষা।

নুসরাত জাহান পন্নি

শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ