গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খড়গ যেন ভোক্তার ওপর না পড়ে

 

‘এলএনজির দায় বিদ্যুতের ঘাড়ে: গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তাতে সাধারণ মানুষ হতাশই হবেন বলেই ধারণা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পেট্রোবাংলার তথ্য বিশ্লেষণপূর্বক আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই সময় বলা হয়েছিল বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে। এ যুক্তিতে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়। তবে সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্ধিত গ্যাস দেয়া হয়নি। এমনকি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম প্রায় ১৭৯ শতাংশ বৃদ্ধির সময়ও বলা হয়েছিল বর্ধিত দামে এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করেনি পেট্রোবাংলা। বাড়তি গ্যাস না দিলেও বর্ধিত দামে এলএনজি আমদানির দায় বিদ্যুতের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।

পত্রিকান্তরে একজন জ্বালানিবিশেষজ্ঞ বলেছেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোকে মূল্য সমন্বয় বলছে। কারণ, তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে। আসলে এটা মূল্যবৃদ্ধি। প্রশ্ন হলো, মূল্যবৃদ্ধিকে অবধারিত ধরা হচ্ছে কেন? উৎপাদন খরচ কমানোর চেষ্টা কোথায়? বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতা বাড়িয়ে, সঠিক জ্বালানির ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একসময় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানির মাধ্যমে মূল্য সমন্বয় করা হলে এই বিষয়গুলো আসত, অংশীজনেরা পর্যালোচনা করতে পারতেন, যুক্তি তুলে ধরতে পারতেন; কিন্তু সরকার নির্বাহী আদেশে দাম বাড়াচ্ছে। ফলে সরকার যা বলছে, তা-ই মেনে নিতে হচ্ছে।

বিদ্যুতের দাম তিন বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়ানো হলে একসঙ্গে চাপ পড়বে না, এটা ঠিক; কিন্তু ধারাবাহিকভাবে শিল্প খাতে ব্যয় বাড়বে, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। কারণ, সব শিল্পেই পণ্য উৎপাদনেই বিদ্যুৎ লাগে। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, বর্তমানে সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় দেশি গ্যাস ব্যবহার করে। বিদ্যুৎ খাতে সরকার যে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা গ্যাস উত্তোলনে ব্যবহার করলে নতুন গ্যাস পাওয়া সম্ভব। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালালে উৎপাদন খরচ কমবে। এমনকি খোলাবাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেও ফার্নেস অয়েলের চেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

অবশ্য আশার খবরও আছে। মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবন কার্যালয়ে সাক্ষাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, দেশের জ্বালানি ঘাটতি নিরসনে সরকার অফশোর গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এজন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। জ্বালানি ঘাটতি নিরসনে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি, অতি দ্রুত তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। যেহেতু উৎপাদন ব্যয় কমানোর চেষ্টা না করে উচ্চ ব্যয় সাধারণ মানুষের ওপর চাপালে তা অনেকেই সহ্য করতে পারবেন না। সরকারের উচিত হবে জনগণের ভোগান্তি না বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় না বাড়ানো।