হাজারের বেশি ক্রয়াদেশ পেল চীনের সি৯১৯ উড়োজাহাজ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনের তৈরি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সি৯১৯-এর এক হাজারের বেশি নতুন ক্রয়াদেশ (অর্ডার) পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (কোমাক)। প্রথম সফল বাণিজ্যিক ফ্লাইটের পর তারা এ তথ্য জানিয়েছে। খবর: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

চীনের মূল উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার চায়নার এই অর্ডারের পর কোমাকের দীর্ঘদিনের ব্যবসা নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি মে মাসের শুরু পর্যন্ত সি৯১৯-এর একমাত্র ক্রেতা ছিল চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। এয়ার চায়নার সাম্প্র্রতিক অর্ডারের ফলে কোমাক এখন আরও বলিষ্ঠ অবস্থানে পৌঁছে গেছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

কয়েক বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সি৯১৯-এর একটি নকল কপপিটে বসে বিশ্বকে তাদের আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। শি এই প্রকল্পটিকে চীনের অন্যতম উদ্ভাবনী সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

কোমাক আগে জানিয়েছিল, তারা এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি উড়োজাহাজের অর্ডার পেয়েছে। এই অর্ডারের বেশিরভাগই এসেছে চীনা এয়ারলাইনস থেকে।

আন্তর্জাতিক মহলে উড্ডয়ন খাতে বোয়িং-এয়ারবাসের আধিপত্য অবসানের আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পশ্চিমাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে এই উড়োজাহাজ শিল্প খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে চীন। বিশেষ করে দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চীনের এই পদক্ষেপ। চলতি বছর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে সি৯১৯ এবং সিওএমএসির পদচিহ্ন আরও দৃঢ় করার ইঙ্গিতও দিয়েছে দেশটি। উড়োজাহাজের নিরাপত্তা বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নে জর্জর এই খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বোয়িং। সাম্প্রতিক কিছু দুর্ঘটনায় বোয়িংয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উড্ডয়ন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের উৎপাদন সম্প্রসারণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সি৯১৯ উড়োজাহাজ অনেকটাই বোয়িংয়ের এই মডেলের আদলে তৈরি। বিশ্লেষকদের মত, বোয়িংয়ের শূন্যস্থান পূরণে সফল হতে পারে চীনের প্রতিষ্ঠানটি।

এই খাতের অপর বড় প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসও সরবরাহ শৃঙ্খলের জটিলতায় ভুগছে। এসব কারণে তারা বেশ কিছু অর্ডারের ডেলিভারি বিলম্বিত করে ২০২৫ সালে নিয়েছে। এটি বোয়িংয়ের ৭৩৭ ও এয়ারবাসের এ৩২০ মডেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। যদিও পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে ১৬৪ আসনের উড়োজাহজটির আরও  অনেক সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এয়ার চায়নার কাছে উড়োজাহাজ বিক্রি নিশ্চিত করায় কোমাকের জন্য আরও ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হতে পারে।

গত ১ মে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহƒত হয়েছে কোমাক সি৯১৯ উড়োজাহাজ। প্রথম ফ্লাইটটি সফলভাবে সাংহাই থেকে বেইজিংয়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। বেইজিংভিত্তিক উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার চায়না ৬০টি আন্তর্জাতিকসহ মোট ১৯৬টি গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ার উড্ডয়ন খাতের বিশ্লেষক হিউ রিচি বলেন, আমার মতে সি৯১৯ হচ্ছে বড় একটি উন্নয়ন, যা শুধু চীনের জন্যই নয়, সার্বিকভাবে উড্ডয়ন খাতে এ মডেলটি নতুন একটি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা করে দিয়েছে। ৭৩৭ ও বোয়িং থেকে মানুষ সরে আসতে চাইছে। বোয়িং ক্রেতাদের জানিয়েছে, অর্ডার অনুযায়ী উড়োজাহাজ সরবরাহে দেরি হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে এখন সব নির্মাণাধীন বা ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত উড়োজাহাজের নতুন করে নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে হচ্ছে।

আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ‘অংশীদাররা’ সবার আগে আন্তর্জাতিক ক্রেতা হতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভবিষ্যতে চীন বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে এই উড়োজাহাজ কেনা ও ব্যবহারের শর্ত জুড়ে দিতে পারে।

কোমাক তাদের সি৯১৯-এর উৎপাদন বাড়াতে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে আরও কয়েকশ বিলিয়ন অর্থ বিনিয়োগ করবে। চীনের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ গত মাসে বলেছিল, তারা চলতি বছর সি৯১৯-এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাভিয়েশন সেফটি এজেন্সির অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে, যে প্রক্রিয়া ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল।