খেলাপির পরিমাণ ২৪ কোটি টাকা

সোনালী লাইফের পরিচালক অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক ও রূপালী ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েল। তার মালিকানাধীন ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেড অগ্রণী ব্যাংক পিএলসিতে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। ব্যাংকটির বাণিজ্যিক করপোরেট শাখায় চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত খেলাপি পাওনার পরিমাণ ২৪ কোটি চার লাখ টাকা। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে বন্ধকিতে রয়েছে চট্টগ্রামের সুগন্ধা আবাসিকের মিরেজ টাওয়ার, যা ঋণের তুলনায় অনেক কম দামি জমি। অথচ ঋণখেলাপি হয়েও পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন তিনি।

অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি সূত্রে জানা যায়, ব্যবসার প্রয়োজনে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি’র বাণিজ্যিক এলাকা করপোরেট শাখা থেকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক ও রূপালী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েলের মালিকানাধীন ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামের ঋণ নেয়া হয়। যিনি মিরেজ গ্রুপের একজন পরিচালক। প্রথম দিকে কয়েকটি ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করলেও পরে আর ঋণ পরিশোধ করেনি। ফলে তিনি অগ্রণী ব্যাংকের বাণিজ্যিক করপোরেট শাখায় ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। বর্তমানের শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েলের মালিকানাধীন ফিনেস অ্যাপারেলেসের কাছে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত খেলাপি পাওনার পরিমাণ ২৪ কোটি চার লাখ টাকা। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে বন্ধকীতে রয়েছে চট্টগ্রামের সুগন্ধা আবাসিকের মিরেজ টাওয়ার, যা দিয়ে পুরো খেলাপি ঋণ কভার করা যাবে না।

জানা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক হলেন শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েল। বিমা খাতের এ কোম্পানিটির ২০২২ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ লাখ শেয়ার হোল্ডিং করেন খেলাপি ব্যবসায়ী  ডানিয়েল। যিনি আবার সাধারণ বিমা খাতের আরেক কোম্পানি রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের একজন স্বতন্ত্র পরিচালক। এছাড়া এ খেলাপি ঋণের বন্ধকদাতা হিসেবে আছেন ডানিয়েলের পিতা আবদুল মতিন। যিনি কর্ণফুলী ইপিজেটে অবস্থিত ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানি আইন ১৯৯২ (২০১৮ সালে সংশোধিত) ১৭ ধারা বলা আছে, কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা বিমা কোম্পানির পরিচালক যে ব্যাংকে ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছেন, সেই ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি পরিচালককে দুই মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধে নোটিশ প্রদান করে। আর এ সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে পরিচালক পদ শূন্য হয়।

আর বিষয়টি নিয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একাধিক আইন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি হলে কোনো বিমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে পারবে না। এমনকি খেলাপি ঋণের জামিনদারও যদি কোনো বিমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হন, তিনিও পরিচালক পদ হারাবেন।

খেলাপি পরিচালক বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্সেক্ষর পরিচালক ও মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, আইন অনুসারে কোনো খেলাপি ঋণের গ্রাহক বিমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। শুধু তিনি নন, এ ধরনের আরও কয়েকটি বিমা প্রতিষ্ঠানের  পরিচালক পদে বেশ কয়েকজন ঋণ খেলাপি আছে। আমরা ৮৭টা বিমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের সিআইবি তথ্য জানার জন্য বাংলাদেশে ব্যাংকে চিঠি দিব। বাংলাদেশে ব্যাংক থেকে তথ্য পেলে তখন ব্যবস্থা নিতে পারব। যদি খেলাপি হন তাহলে পরিচালক পদ ছাড়তে হবে।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি’র উপ মহাব্যবস্থাপক ও বাণিজ্যিক এলাকা করপোরেট শাখা প্রধান শাহেদ আমিন শেয়ার বিজকে বলেন, শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েলের মালিকানাধীন ফিনেস অ্যাপারেলেস লিমিটেডে আমাদের খেলাপি গ্রাহক। উনারা সুদ মওকুফের কথা বলেছেন, কিন্তু ডাউন পেমেন্ট দেয় নাই। তবে উনার এককালীন টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে দিবেÑএমন কথা বলেছেন। যদিও উনাদের ফিনেস অ্যাপারেলস এখন বন্ধ আছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যরেন্সের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েলে ব্যবহƒত মুঠোফোন নাম্বরের যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটি কেটে দেন। পরে উনার মন্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে উনার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফিনেস অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা কারখানা বিক্রয় করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করব। আমরা একটি বিদেশি কোম্পানির সাথে বিক্রি করার কথা বলছি। আশা করি, তাড়াতাড়ি লেনদেন হবে। আমরা ব্যাংকে সুদ মওকুফের আলোচনা করেছি। সবমিলিয়ে ১৬-১৭ কোটি টাকায় নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।