মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে চক্র গঠনের দায় দুই দেশের সরকারকে দিলেন শীর্ষ রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ী ও রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার নেতারা। সংসদ সদস্যরাও এজেন্সি বাছাইয়ের দায় মালয়েশিয়া সরকারের ওপর চাপালেন। শেষ সময়ে কর্মী যেতে না পারার দায়ও মালয়েশিয়ার সরকারের দিকে ঠেলে দিলেন ব্যবসায়ীরা। আটকে থাকা মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের সমস্যার সমাধান এবং বাস্তবতার আলোকে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার ১০১টি এজেন্সির প্যানেলের পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ের বায়রার সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা তো মালয়েশিয়ায় বলতে যাইনি। আমি তো তদবির করতে যাইনি, আর কেউ গেছে কি না, তা জানি না।’ সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট বলে কোনো শব্দ নেই। মালয়েশিয়ার সরকার এজেন্সি বাছাই করেছে। আল্লাহর রহমতে কাকতালীয়ভাবে আমরাও সিলেক্ট হয়েছি।’
বায়রা কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘কেউ প্রমাণ করতে পারবে না এমপিদের নেতৃত্বে লুট হয়েছে।’ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না বলে তা যে অসত্য, এমনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি তারা। সরকার ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জনপ্রতি ছয় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে; এর জবাব দেবে কে? ২০২২ সালের জুনে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের ৪ এমপির প্রতিষ্ঠানসহ ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়। এগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়। এরপর তাদের সঙ্গে যোগ হয় আরও ৭৫টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি। সিন্ডিকেটে ঢুকে ব্যবসা করা এমপিদের প্রসঙ্গে সংবাদ এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
আমাদের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বাড়ার মানে দেশও এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ও জালিয়াতির কারণে ২০১৮ সালে পূব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করেছে মালয়েশিয়া। তারপর নানা তৎপরতায় শ্রমবাজারটি চালু হয়।
তখন বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারী সব প্রতিষ্ঠানই জনশক্তি পাঠাতে পারবে। কিন্তু আদৌ যে পারছে না এবং শ্রমিকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন; সেটিই বাস্তবতা। ‘আল্লাহর রহমতে এবং কাকতালীয়ভাবে’ এমপি এবং তাদের বন্ধুরাই (সিন্ডিকেট শব্দে তাদের আপত্তি রয়েছে) ব্যবসা করছেন। কাজের জন্য বিদেশগামী কর্মীদের রক্ষায় সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
রেমিট্যান্স কমে গেলে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। কিন্তু নিরীহ কর্মীদের পাশেও দাঁড়াতে হবে। যাদের অনেকেই ভিটেমাটি বিক্রি করে কিংবা উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার খরচ জোগাড় করে। সহায়-সম্বল বিক্রির ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করে একজন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যান। দুর্ভাগ্যবশত ওই টাকা চার বছরে তুলতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নিঃস্ব হিসেবে দেশে ফিরতে হয়। আমরা আশা করি, সরকার শিগগির বিষয়টির সুরাহা করবে।