বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে যশোরের চাঁচড়া মাছের পোনার বাজারে

প্রতিনিধি, যশোর : মৌসুমের শেষ সময়ের বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে এসেছে যশোরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লিতে। প্রজনন মৌসুমে অনাবৃষ্টি ও খরায় মাছচাষিরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছিল, পোনা বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকাল ৭টার দিকে শহরের চাঁচড়ার বাবলাতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গত কয়েক মাসের তুলনায় মাছের কেনাবেচা বেড়েছে।

মাছচাষিরা জানান, গত তিন মাস ধরে এ অঞ্চলে অনেকটা বৃষ্টিহীনতার পাশাপাশি বিরাজমান অতিমাত্রার তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে শোচনীয় পরিস্থিতিতে ছিল তারা। মাছের প্রজনন মৌসুম অনেকটা অনাবৃষ্টিতে কেটেছে তাদের। সে কারণে সময়মতো তারা মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি করতে পারেননি। তাই গত দুদিন ধরে বিরতি দিয়ে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে বেচাকেনা বেড়েছে। তবে বাইরের জেলা থেকে প্রত্যাশিত ক্রেতারা এখনও বাজারে আসছেন না।

চাঁচড়া বাবলাতলা পোনা বাজারে কথা হয়, রবিউল ইসলাম রবি নামে এক পোনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিরামহীন বৃষ্টি হলেও, যশোরাঞ্চলে সেই বৃষ্টির দেখা যাচ্ছে না। তবে গত দুদিন ধরে সামান্য যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পুকুর ও জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়া যাচ্ছে। এসব কারণে বাজারটিতে বেচাকেনা বাড়ছে। তবে পোনা কেনার জন্য যারা আসছেন তারা সবাই যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে। দেশের প্রত্যন্ত জেলা থেকে এখনও পর্যাপ্ত ক্রেতারা আসছেন না বলে তিনি দাবি করেন।

একই কথা বলেন, আব্দুল কাদের নামে আরেকজন পোনা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এ বছর প্রচণ্ড গরমের কারণে গত দুই মাসে রেণুপোনা উৎপাদন কমে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। রেণুপোনা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়ে তাপমাত্রা ৪২-৪৩ ডিগ্রির ওপরে বিরাজ করায় পোনা মরে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। তীব্র গরমে পানিতে মাছের ডিম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ স্থানে পুকুর ও জলাশয়ে পানি গরম থাকায় মাছ মরে যায়। ফলে গত এপ্রিলের শুরু থেকে রেণু ও পোনা বেচাকেনা ছিল না বললে চলে। তবে এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সামনে আরও বৃষ্টি হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

তবে পোনা বাজারে আসা ক্রেতারা দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। জেলার মণিরামপুর থেকে আসা শরিফুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, প্রতি কেজি গøাসকার্প মাছের পোনা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, বøাক কার্প ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জাপানি কার্প ২৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব পোনা কেজিতে কোনোটি ২০০ পিস আবার কোনোটি ৮-১০টাও হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এর আগে এমন দামে তারা কখনও মাছের পোনা কেনেননি। এখন বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।

তবে ক্রেতাদের দাম নিয়ে হতাশার বিষয়ে দ্বিমতপোষণ করেছেন জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান। তিনি বলেন, এ বছর মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ, শ্রমিক খরচ যেহারে বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় বাজারে পোনার দাম সঠিক আছে। তাছাড়া এসব পোনার অধিকাংশই গত বছরের। এসব মাছ অতিমাত্রার বর্ধনশীল। যে কারণে এর চাহিদাও বেশি।

ফিরোজ খান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত চার মাসে মৎস্য খাতে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হওয়ার মতো নয়। তারপরও শেষ সময়ে মৌসুমি বৃষ্টি পেয়ে আমরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।

উল্লেখ্য, যশোরে সমিতিভুক্ত রেণুপোনা উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে ৩৬টি। এর বাইরেও ১০-১৫টি আছে। এসব হ্যাচারিতে চলতি বছর দুই থেকে আড়াই লাখ কেজি রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু গরমের কারণে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ হয়নি। অথচ এ সময় অন্যান্য বছরে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি হয়েছে।