৪ ঘণ্টা পর শাহবাগের অবরোধ তুলে নিল শিক্ষার্থীরা

কোটাবিরোধী আন্দোলন: একদফা দাবির ঘোষণা  

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে প্রতিবাদ সমাবেশের ৪ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে দিয়ে আন্দোলনকারীরা তাদের আজকের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ বা বাংলা অবরোধ কর্মসূচির সমাপ্তির ঘোষণা দেয়। তবে আগামীকাল থেকে একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথাও জানায়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। আন্দোলনের একজন সংগঠক বলেছেন,  “জাতীয় সংসদে আইন পাস করে সকল গ্রেডের চাকরিতে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে, এটাই হলো আমাদের একদফা দাবি।”

এর আগে মিন্টো রোড, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ও বাংলামোটর থেকে  অবরোধ তুলে দিয়ে রাত ৭টার দিকে শাহবাগে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাব মোড়ের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরাও এসময়ে বিক্ষিপ্ত মিছিল করে এসে শাহবাগের সমাবেশকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। 

আজকে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা মিছিল করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসি হয়ে আবার শাহবাগ মোড়ের এসে সেখানে সড়ক অবরোধ করে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।  

গতকাল শনিবার শাহবাগের সমাবেশ থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিরঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম। পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ (বাংলা অবরোধ) কর্মসূচি।

প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার পর দুপুর ১টার দিকে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন জাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে যানজট সৃষ্টি হয়।

বরিশালের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাফনের কাপড় জড়িয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক স্থানে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।

রোববার (৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক এবং ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন। এসময় অনেক শিক্ষার্থীকেই কাফনের কাপড় পরে থাকতে দেখা যায়। থেমে থেমে বৃষ্টির মধ্যেও তারা সড়কে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান। কোটা বাতিলের দাবিতে প্লাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। 

শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে স্থবির হয়ে পড়ে বরিশাল-কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়ির যাত্রীরা। আন্দোলনকারীরা ঘোষিত ৪ দফা বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিবেন বলে হুঁশিয়ারি জানান।

খুলনা শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা শিববাড়ি মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়টি অবরোধ করার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এই মোড়ের একদিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্টেশন, আরেকদিকে বিভাগের সব থেকে বড় পাইকারি আড়ৎ- বড়বাজার এবং অন্যদিকে নিউমার্কেট অবস্থিত। মোড়টি আটটি রাস্তার সংযোগস্থল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মোড় অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।