গ্যাজপ্রম, সিনোপ্যক বাদ স্থলভাগে ১৯ গ্যাস কূপ খনন টেন্ডারে

# বিশেষ আইনে এসব কূপ খননের কাজ পেতে যাচ্ছিল রুশ চীনাসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক :স্থলভাগের ১৯ গ্যাসকূপ খননে চলতি মাসেই উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে পেট্রোবাংলা। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়। জানা গেছে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ টি গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছিল। এরমধ্যে ১৫টি কূপ খনন করা হয়েছে। বাকি খূপ গূলোর মধ্যে ১১টি খনন করবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। একটি কূপ খনন কাজ চলমান। বকি কূপ গুলো আওয়ামীলীগ সরকারের সময় বিশেষ আইনের আওতায় টেন্ডার ছাড়িই খননের পরিকল্পনা ছিল। কয়েকটি কূপ খনেন রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও চীনের সিনোপ্যকের সঙ্গে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল।

এই প্রক্রিয়ায় দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অন্তবর্তীকালীন সরকার এসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ বিধানে প্রক্রিয়াধীন সব কার্যক্রম স্থগিত করে ফলে। পরিকল্পনার ২৩টি বর্তমানে কূপ টেন্ডায় প্রক্রিয়ায় খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ৪টি গভীর কূপ (৫০০০ মিটারের বেশি) খননে ইতোমধ্যে মটেন্ডার ডাকা হয়েছে। বাকি ১৯ কূপ খননে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তুত করে জ্বালানি বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে অনুমোদন মিলবে। পরের সপ্তাহেই আমরা উন্মুক্ত দরপত্র ডাকবো। ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এখন থেকে কূপ খনন কাজ হবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। জিটুজিও করা হবেনা, সবার জন্য উন্মুক্ত। তিনি বলেন, একটি এলএনজি কার্গোর টাকা দিয়ে দুটি কূপ খনন করা সম্ভব। উপদেষ্টা বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। এর মধ্যে ৬৯টি নতুন কূপ। যার ৩৩টি বাপেক্স নিজস্ব রিগ দিয়ে খনন করবে। আরও ১০টি খুঁড়বে রিগ ভাড়া করে। বাকী ২৬টি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হবে। এ সময়ে ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভারের কাজ করবে বাপেক্স। সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৬৯ নতুন খূপ খননে সম্ভাব্য ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। এরমধ্যে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে।

বাকি ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ফোন্ড থেকে খরচ করা হবে। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিপিপি অনুমোদন, অর্থ সংস্থান ও বরাদ্দ, স্বল্প সময়ে সম্ভাব্যতা যাচাই, জমি অধিগ্রহণ, রিগ ভাড়া, দক্ষ জনবল ইত্যাদি। এ বিষয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, প্রকল্প দ্রুততম সময়ে অনুমোদন করা হবে। প্রকল্প পরিচালকদের বলা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্ধারিত খরচে কাজ শেষ করতে হবে। তবে একটা সমস্যা রয়েছে জমি অধিগ্রহণ, এটা কিভাবে দ্রুত করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। টেন্ডারে যেসব কূপ ২০২৫ সালের মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে তিতাস ২৮, ২৯ ও ৩০, কামতা ২, বাখরাবাদ ৬ ও ৭, মেঘনা ১ , সিলেট ১১ ও ১০, রশিদপুর ১১ ও ১৩, কৈলাসটিলা ৯, ডুপিটিলা ১, শাহবাজপুর ৫ ও ৭ এবং ভোলা নর্থ ৩ ও ৪। এগুলোর মধ্যে ৮টি অনুসন্ধান, ১২ টি উন্নয়ন এবং ৩টি ওয়ার্কওভার কূপ। এরমধ্যে ভোলার কূপ ৪ টি খননের জন্য গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। আর সিলেট, রশিদপুর এবং কৈলাসটিলার কূপগুলো খননের জন্য সিনোপ্যাকের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল।

সূত্র মতে গ্যাজপ্রমের কাজ বিষয়ে সঙ্গে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টাসহ একাধিক নেতার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর সিনোপ্যাকের বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ কাজে তার সহযোগী ছিলেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ৪টি গভীর কূপ তিতাস ৩, বাখরাবাদ ১১, মোবারকপুর ১ ও শ্রিকাইল ১ দরপত্রের মাধ্যমে খনন করা হবে। এদিকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাপেক্স ১১টি কূপ খনন করবে। এরমধ্যে ২টি অনুসন্ধান সুন্দলপুর সাউথ ১ ও জামালপুর ১। উন্নয়ন কূপ ৩টি সুন্দলপুর ৪, শ্রীকাইল ৫ ও জকিগঞ্জ ২। বাকি ৬টি ওয়ার্কওভার কূপ। এগুলো হলো-তিতাস ১৬ ও ৮, হবিগঞ্জ ৫, বিয়ানীবাজার ২ , রশিদপুর ৩ ও কৈলাসটিলা ১।