বইমেলা ‘সোহরাওয়ার্দীতেই হবে’, আশাবাদী সংস্কৃতি উপদেষ্টা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে, এটা বলা যায়? এই প্রশ্নে ফারুকীর ভাষ্য, ‘আশা করা যায়’।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নতুন বছরের অমর একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে করতে বললেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই মেলা আয়োজনের আশাবাদ জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার নতুন দায়িত্ব পাওয়া ফারুকী বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বইমেলা নিয়ে গণপূর্ত উপদেষ্টার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জড়িত আছে। সেখানেও কথা হয়েছে। এটুকু বলতে পারি, আমরা একটা পজিটিভ আউটকামের দিকে যাচ্ছি।

“আশা করা যায় বইমেলা যেখানে হত, সেখানেই হবে এবং সুন্দর আয়োজনে হবে। কোনো ঝামেলা হবে না। এরই মধ্যে তিন মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে। তিন মন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে, সামনে আরও হবে।”

বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে, এটা বলা যায়? এমন প্রশ্নে ফারুকীর ভাষ্য, “আশা করা যায়।”

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এক দশক ধরে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা। চলতি বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বসে বইমেলার আয়োজন। তবে ২০২৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় গত মেলার সময়ই।

উদ্যান ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির অংশ হিসেবে মার্চ মাস থেকে কিছু প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সে কারণে ২০২৫ সালের বইমেলার জন্য তারা উদ্যানের জায়গা বরাদ্দ দেবে না বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দিয়েছিল।

আর গত ৬ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাংলা একাডেমিকে চিঠি দিয়ে বলেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই নতুন বছরে বইমেলা আয়োজন করতে হবে। ফলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বরাদ্দ না পাওয়ায় বইমেলা কোথায় হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

গণপূর্তের চিঠির পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, তারা আবারও চেষ্টা করবেন যেন বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করা যায়। অপরদিকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা আগের মত বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছেন।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আন্দোলন প্রত্যাহার

শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সমাবেশে হামলার ঘটনায় ১৫ নভেম্বর প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিল ফেডারেশন। তবে বুধবার সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর সেই আন্দোলন কর্মসূচি থেকে তারা সরে এসেছেন।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা জানেন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গত ২ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ হয়ে যায়। পরে ৮ নভেম্বর আমরা গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন থেকে প্রতিবাদ সভা করি। সেই সভাতে কিছু দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করে। সেখানে আমাদের কিছু শিল্পী আহত হন।

“আমরা এখন সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে পেয়েছি এবং তাকে আমরা জানিয়েছি- ১৫ নভেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ করব। তিনি আমাদের বললেন, ‘প্রতিবাদ সভা কেন করছেন? আসুন বসি। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশের জন্য যা করণীয়, আমরা তা করব। আমরা খুশি তার কথায়।”

কী ধরনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন, এ প্রশ্নে কামাল বায়েজীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যে দাবি উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, তা তিনি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।”

‘কেউ কেউ উসকানি দিতে পারে’

সচিবালয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সাংবাদিকদের বলেন, “পতিত স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টের বিচারে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য কেউ কেউ হয়ত নানা রকম উসকানি দিতে পারে। ফেডারেশন নেতারা আমাকে বলেছেন, যে ব্যক্তিরা উসকানি ছড়াচ্ছে, ফেডারেশন তাদের দায়িত্ব নেবে না। ফেডারেশন স্পষ্টভাবে বলেছে, থিয়েটার দলগুলোর কাজ শিল্পচর্চা করা। কোনো বি-টিম হয়ে খেলাটা তাদের কাজ না। আমি উনাদের ওপর খুশি হয়েছি।”

শিল্পকলার সামনে যারা বিক্ষোভ করেছেন, তাদের অনেকেই জুলাই আন্দোলনে ছিলেন মন্তব্য করে ফারুকী বলেন, “তাদের ক্ষোভেরও কারণ আছে। তাদের ক্ষোভটাকেও আমলে নিতে হবে। আমাদের নাট্যকর্মী ভাইবোনদেরও দায়িত্ব আছে। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এটা কোনো সাধারণ সরকার পরিবর্তন হয়নি। জুলাইয়ে অনেকগুলো মানুষ মারা গেছে। এ ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এই সরকার সংস্কৃতিবান্ধব।”

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, “আমি বাইরে থেকে জানতাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঘুমিয়ে থাকে, এটা ঘুমন্ত মন্ত্রণালয়। আমি ভেতরে এসে দেখি এখানে তো অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। এখানে আসার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, নতুন বাংলাদেশের কী ন্যারেটিভ আমরা নির্মাণ করব। ন্যারেটিভ তো কথা দিয়ে নির্মাণ হবে না। ন্যারেটিভ নির্মাণ হবে, সিনেমা দিয়ে, থিয়েটার দিয়ে, গান দিয়ে। এখানে কাজ করার অনেক স্কোপ আছে।”

নতুন বাংলাদেশকে বহুমতের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে চান জানিয়ে ফারুকী বলেন, “আমরা এমন এক বাংলাদেশের ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাই, যেখানে বহু ধর্ম, বহু ভাষা এক জায়গায় থাকে এবং আমাদেরকে সম্প্রীতির কথা বলে। আমাদের সম্পর্কে যে নেতিবাচক ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, তার কাউন্টার করা আমাদের কাজ।

“গত ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চাদরে ঢেকে কীভাবে দুঃশাসনকে জায়েজ করা হয়েছে। কীভাবে গুম-খুনকে জায়েজ করা হয়েছে। কীভাবে ব্যাংক লুটকে জায়েজ করা হয়েছে। এখন আর ১০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয় না, হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়। এই কথাগুলো মানুষকে জানাতে হবে। এজন্য যে এটা যেন আর ঘটে।”