আশুলিয়ায় সড়ক বেহাল দুর্ভোগে মানুষ

জাহিদ হাসান শাকিল, সাভার: সাভারের আশুলিয়ার বেশিরভাগ সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষায় অবস্থা এতটাই নাজুক হয় যে, হেঁটে চলাও দায় হয়ে দাঁড়ায়। কোথাও কোথাও জুতা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়। তবে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর বেশ কিছু সড়ক সংস্কারের কাজ হাতে নিলেও কাজ চলছে ধীর গতিতে। জিরানী-আমতলা আট কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে প্রায় চার ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তারা কাজ শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে কাজ গুটিয়ে চলে গেছেন। তাই দুর্ভোগ নিয়েই এসব সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

জিরানী-আমতলা আট কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের খানাখন্দে সারা বছরই পানি জমে থাকে। প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এক যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। এ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অনেক শিল্পকারখানার পণ্যদ্রব্য আনা-নেওয়ায় চরম বিপাকে রয়েছেন শিল্প মালিকরাও। এছাড়া একাধিক স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে এ সড়কের পাশে। সড়কের পাশ দিয়েও ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারছেন না জনসাধারণ। কোথাও বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে যানবাহন। অনেকে নিজ উদ্যোগে ইট ও বালি ফেলে রাস্তা ঠিক করার চেষ্টা করছেন। রাস্তায় পানি থাকায় অনেকেই জুতা হাতে নিয়ে চলাচল করছেন। সবচেয়ে বিপদে পড়তে হয় এ সড়কে চলাচলকারী রোগীদের। এছাড়া সড়কের পাশের দোকানিদের বেচাকেনা নেই বললেই চলে। বিগত ১০ বছরে সড়কটি সংস্কারের জন্য তিন থেকে চারজন ঠিকাদার কাজ শুরু করলেও কেউই তা শেষ করেননি। এই সড়কের মতোই আশুলিয়ার অন্য আঞ্চলিক সড়কগুলোর একই অবস্থা।

আশুলিয়ায় নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্যাকেজের অধীনে ১০টি আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার কাজ হাতে নেয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর।

সড়কগুলো হলো কুটুরিয়া থেকে বগাবাড়ী সোনিয়া মার্কেট পর্যন্ত ৪.৫৭ কিমি, জামগড়া থেকে চিত্রশাইল কাঠগড়া বাজার পর্যন্ত ৩.৬১৫ কিমি, শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত ১.৫ কিমি, জামগড়া চৌরাস্তা থেকে ভাদাইল পর্যন্ত ২.৪৮৭ কিমি, ভাদাইল চৌরাস্তা থেকে মাদারটেক আণবিক শক্তি কমিশন দ্বিতীয় গেট পর্যন্ত ১.২৮ কিমি, বার্ডস কারখানার ফটক থেকে গাজীরচট আলিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত ১.২৭০ কিমি, কুমকুমারি থেকে সাধুপাড়া পর্যন্ত ২.৩০ কিমি এবং ধলপুর থেকে কাঠগড়া পর্যন্ত ১.৫২৫ কিমি। গত জুনে সব সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোনোটাই শেষ হয়নি। এছাড়া আরও একটি প্রকল্পে আশুলিয়ার কবিরপুর-বাইদগাও আঞ্চলিক সড়কের কাজও গত জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটিও শেষ হয়নি।

সড়কের পাশের দোকানিরা জানান, সড়কের জমে থাকা ময়লা পানি দোকানে ঢুকে পড়ে। প্রতিদিনই সকালে দোকানে জমে থাকা পানি সেচ দিতে হয়। সড়কের বেহাল দশার জন্য ক্রেতারা খুব প্রয়োজন না হলে আসতে চান না। এছাড়া দিনে দু-একবার অটোরিকশা বা রিকশা উল্টে যায়।

স্কুলগামী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এই বেহাল সড়কে হাঁটতে গিয়ে জামা, প্যান্ট ও জুতা ময়লা হয়ে যায়। প্রায়ই স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়। যানবাহনের চালকরা জানান, প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। সড়কের এমন বেহাল দশা যে আয়ের অধিকাংশ টাকা যানবাহন মেরামতে খরচ হয়ে যায়।

সড়কগুলোতে চলাচলকারী কয়েকজন কারখানা শ্রমিক জানান, জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে সড়কগুলো দিয়ে ছুটে চলতে হয় তাদের। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকলেও কোনো প্রতিকার নেই। বর্ষা ছাড়াও পানি জমে থাকে সড়কে। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে কারখানায় যেতে চাইলেও সড়কের কারণে সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে সাভার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর জাানান, বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার করার জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বৃষ্টি ও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ শেষ করতে পারেননি। ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য।

উপজেলা প্রকৌশলী ধীরেন্দ্র দেবনাথ জানান, আঞ্চলিক সড়কগুলোতে কাজ চলছে। তবে এর আগে কিছু জটিলতা ছিল, তাই কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। তবে এখন আর সমস্যা নেই। খুব দ্রুতই সড়কগুলোর সংস্কারকাজ শেষ হবে।