বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭’-এর দ্বিতীয় দিন থেকে এদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা হলো অনলাইন লেনদেন প্ল্যাটফর্ম পেপাল জুম সার্ভিসের। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবসহ উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। সেবাটি উদ্বোধনকালে তিনি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো যুক্তিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত বটে। খেয়াল করা দরকার, জুম সার্ভিস ও পেপাল একসময় পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে পেপাল অধিগ্রহণ করে জুম সার্ভিসকে। তারপর থেকে অনলাইন আর্থিক লেনদেনে এর ওপর আস্থা বাড়তে থাকে। চলতি বছর অনলাইন পেমেন্ট সেবার যে বৈশ্বিক রেটিং হয়েছে, তাতেও তালিকার প্রথম দিকে অবস্থান করছে জুম। ওই রেটিংয়ের চেয়েও জুম সার্ভিস বিষয়ে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মন্তব্যকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কেউ কেউ। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল বলেছিল, যে গুটিকয়েক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্বচ্ছতার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে অবদান রাখছে জুম সেগুলোর অন্যতম। ওই মন্তব্যকে আমলে নেওয়া হলে দ্বিমত পোষণের সুযোগ কম যে, অন্তত এ সেবাটির পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স অন্তঃপ্রবাহে কোনো অস্বচ্ছতা থাকবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার মতোই আশাবাদী যে, হুন্ডি-দুর্নীতির দিন শেষ হতে চলেছে। কার্যত মূলধারার ‘ইনবাউন্ড’ রেমিট্যান্স আহরণে পেপাল জুম আসলে কতটুকু অবদান রাখে সেটি এখনও দেখার বিষয়। তবে এর যে একটা প্রভাব থাকবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। তার চেয়েও বড় কথা, স্থানীয় ফ্রিল্যান্সারদের বহুদিনের দাবি ছিল বাংলাদেশে পেপাল চালুর। কেননা বৈশ্বিক লেনদেনে প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল তাদের। এ অবস্থায় দেশেই পেপাল সেবার যাত্রা তাদের অনেকের মুখে হাসি ফোটাবে। সেজন্য সংশ্লিষ্টরা ধন্যবাদ পাবেন বৈকি।
পেপাল সেবাযাত্রায় স্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু কথা বলা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে প্রথমেই দৃষ্টি দেওয়া দরকার, এখন পর্যন্ত মাত্র একটি দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে পেপাল জুমকে যুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি সেবার সহায়তায় কম-বেশি ৪০ মিনিটের মধ্যে নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থানীয় অ্যাকাউন্টে ডলার পাঠানো যাবে। সেক্ষেত্রে প্রতিবারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ হাজার ডলার ও প্রতি লেনদেনে এক হাজার ডলার পাঠাতে ফি দিতে হবে চার দশমিক ৯৯ ডলার পর্যন্ত (এক হাজার ডলারের বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে দিতে হবে না বাড়তি ফি)। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কেবল যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে শুরু হলেও ক্রমে অন্যান্য দেশ থেকেও বাংলাদেশিরা পেপাল জুমের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে দ্রুতই সংযোগটি সম্পন্নের উদ্যোগ নেওয়া হোক। তাতে প্রতিবেশী ভারত, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবার লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা ঠিক থাকলেও লেনদেন ফি কিছুটা কমাতে পারলে ভালো হয়। দেখার বিষয়, এক হাজার ডলারের বেশি যারা লেনদেন করছেন, তারা সুবিধা পাচ্ছেন বেশি; অথচ একই ফি গুনতে হচ্ছে এক হাজার ডলারের কম আনয়নকারীকেও। প্রতিবার ৮-১০ হাজার ডলার আনতে পারবেন এমন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা কমই এদেশে। ফলে বিপুলসংখ্যক ফ্রিল্যান্সারের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় লেনদেন ফি হ্রাসের ইস্যুটি সংশ্লিষ্টদের ভালোমতো খতিয়ে দেখা উচিত। আরেকটি বিষয়, কেবল ‘ইনবাউন্ড’ পেপাল নয়, ‘আউটবাউন্ড’ পেপাল সেবাও দরকার। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আইনের কথা বলেছেন, সেটি অগ্রাহ্য করা যাবে না। এর মধ্যেই ‘আউটবাউন্ড’ পেপাল সেবা চালুর কোনো সুযোগ রয়েছে কি না, সে অনুসন্ধানও অব্যাহত রাখা জরুরি।