মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: গত বছরের লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী আঁশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এর চাহিদা ও শেয়ারদর বেড়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কারও কারও মতে, শুধু মুনাফার কারণে নয়, সোনালী আঁশের শেয়ারদর বাড়ার পেছনে ‘কারসাজি’ও রয়েছে।
বাজার চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, কিছুদিন নি¤œমুখী থাকার পর সম্প্রতি সোনালী আঁশের শেয়ারদর আবারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ২১ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী আঁশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বিশ্বব্যাপী দিন দিন বাড়ছে। তবে পাটের তৈরি জুতা রফতানি আদেশের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এটা বাড়াতে পারলে আমাদের কোম্পানির অবস্থান আরও ভালো হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
বর্তমানে শেয়ারদর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আগের চেয়ে ব্যবসায় ভালো করছে, সে কারণে শেয়ারটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ শেয়ারের দর বাড়া-কমা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের চাহিদার ওপর।’
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় মুনাফায় রয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। গত ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ৪৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। আগের বছর লোকসান ছিল ১৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক টাকা ৫৯ পয়সা। গত বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৬০ পয়সা। তবে এতে সন্তুষ্ট নন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। তারা চান এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হোক। কারণ প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে মাত্র দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোম্পানিটি ১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মোট শেয়ারসংখ্যা ২৭ লাখ ১২ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৬১ দশমিক ৯৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিকের পাঁচ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। গত পাঁচ বছরে প্রতিবারই প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ২০১০ সালে বোনাস শেয়ার দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ কার্যদিবসে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ২১৯ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়। আর দর ওঠানামা করে ২১৮ থেকে ২২৫ টাকার মধ্যে। দিনজুড়ে ২৮৬ হাওলার মধ্য দিয়ে ২০ হাজার ৬১৯টি শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরের মধ্যে এ শেয়ার সর্বোচ্চ ২৬৯ টাকায় লেনদেন হয়। একই সময়ের মধ্যে শেয়ারটি সর্বনিম্ন ১৬০ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়।
এদিকে মুনাফায় ফিরলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। অডিটর আপত্তি দিয়েছে তালিকাভুক্ত সোনালী আঁশ কর্তৃপক্ষ মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। পুনর্মূল্যায়ন বাড়ায় স্থায়ী সম্পদের ওপর অবচয় চার্জ না করে কোম্পানি এ মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। ফলে এটাকে নিরীক্ষক কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন (আপত্তিকর মন্তব্য) করেছে।
বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস)-১৬ অনুযায়ী, স্থায়ী সম্পদদের ওপর অবচয় চার্জ করতে হয়। ফলে মুনাফা ও সম্পদ কমে আসে। কিন্তু সোনালী আঁশে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পুনর্মূল্যায়নে স্থায়ী সম্পদ বাড়লে তার ওপর অবচয় চার্জ করা হচ্ছে না। যে কারণে ওই সময় থেকেই মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হচ্ছে।