সালমান এফ রহমানের ৬৮০০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সালমান এফ রহমান। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন এই সালমান। বিগত সরকারের আমলেও শেয়ারবাজারে নানা অনিয়ম করেছেন তিনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যাংক ও পুঁজিবাজার লুটেরাদের ধরতে কঠোর হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। এমন পরিস্থিতির মধ্য সালমান এফ রহমানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহায়তায় এসব শেয়ার জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এছাড়া আরও অন্যান্য কোম্পানির ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব ও পুঁজিবাজারের ২২ হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর পুঁজিবাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের শেয়ার জব্দে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করেছে বিএসইসি।আরও জানা যায়, আলোচ্য সময়ে ১১২টি মামলায় ৩৬৬ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। যেসব হিসাবে অনিয়ম পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও চলছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাটি থেকে জানা গেছে। বিগত সরকারের আমলে বহু রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক খাতের অর্থ তছরুপ করে বিদেশে পাচার করেছে। আবার পুঁজিবাজার লুটপাটে যুক্ত ছিল কিছু চক্র। পুঁজিবাজারে লুটপাটের কারণে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তিন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিসহ দেড় সহশ্রাধিক
ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে সংস্থাটি। এখনও সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে প্রতিদিনই শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ। সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট এগমন্টের সঙ্গে যুক্ত ১৭৭টি দেশ ছাড়াও একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিএফআইইউর। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্ভাব্য সব দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সব রকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

পুঁজিবাজারে অনিয়মের বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থার পেছনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরদারির অভাব ছিল। আবার কারসাজির বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা না করাকেও দায়ী করেছেন তারা।
দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ১৫ বছর পুঁজিবাজারে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শেয়ার বাজারে অনিয়মে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আওয়ামী আমলের কমিশন সহায়ক হিসেবে ছিল।
জানা গেছে, আগের সরকারের আমলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি ছিল ঢিলেঢালা। একইসঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও ঘাটতি ছিল। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের কষ্টার্জিত টাকা পুঁজিবাজারে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত বাজার ছেড়ে দিয়েছেন।

পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। তবে সেই নিরাপদ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেও টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ বেশ কয়েকটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নজিরবিহীনভাবে মিউচুয়ার ফান্ডের টাকার অপব্যবহার করেছে। যদিও তারা এসব বিনিয়োগ সুরক্ষা ও ভালোভাবে পরিচালনার জন্যই নিযুক্ত হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, দুর্বল অনেক প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারসাজিকারীদের এসব কোম্পানির শেয়ারের দামে কারসাজির অনুমতি দিয়েছে, যাতে শেয়ারের দাম বেড়ে যায় ও আইপিও অনুমোদনের যৌক্তিকতা পায়।

এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তায় গত ১৫ বছর ধরে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আর এসব অনিয়মে বিভিন্ন সময়ে সালমান এফ রহমানের নাম এসেছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া অন্যান্য যারা ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে টাকা লুট করে বিদেশ পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।
তবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে বিএফআইইউ।