চীনের ডিপসিকে এনভিডিয়ার শেয়ারে ১৭% পতন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-চালিত নতুন একটি চ্যাটবট এনেছে। এরপর বিশ্বজুড়ে চিপ নির্মাতা এবং ডেটা সেন্টার কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক হারে ছেড়ে দিতে শুরু করেছেন। ফলে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সোমবার এনভিডিয়ার বাজার মূলধন প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার কমে যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির একদিনে সবচেয়ে বড় মূল্যহ্রাস। খবর: এপি।

শেয়ারদর ১৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ হিসেবে তাদের বাজার মূলধন কমেছে ৫৮৯ কোটি ডলার। কোম্পানিটি অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের পর বিশ্বের তৃতীয় মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ডিপসিক নামের চ্যাটবটটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে উন্মোচন করা হয়। এরপর দ্রুত এটি অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা বিনা মূল্যের অ্যাপে পরিণত হয়েছে। ডিপসিক বাজারে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পুঁজিবাজারে পশ্চিমা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক ধস নেমেছে। ডিপসিকের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং তুলনামূলক কম খরচে এই এআই চ্যাটবটটির তৈরি করার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআই কোম্পানিগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক অ্যান্ড্রেসেন ডিপসিককে এআই ক্ষেত্রে ‘সবচেয়ে বিস্ময়কর ও চমকপ্রদ অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ডিপসিক দাবি করেছে, তাদের সর্বশেষ এআই মডেল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিল্প-নেতৃস্থানীয় মডেলগুলোর সমমানের, তবে খরচ অনেক কম। গবেষকরা জানিয়েছেন, অ্যাপটি তৈরিতে মাত্র ৬০ লাখ ডলার খরচ হয়েছে, যা মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর বিলিয়ন ডলার খরচের তুলনায় নগণ্য।

ডিপসিক একটি চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি। এর সদর দপ্তর দক্ষিণ-পূর্ব চীনের হাংঝৌ শহরে। কোম্পানিটি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের জনপ্রিয় এআই অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে ১০ জানুয়ারি মুক্তি পায়। ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং। তিনি মূলত হেজ ফান্ডের মাধ্যমে ডিপসিকের আংশিক অর্থায়ন করেন। ৪০ বছর বয়সী এই ইনফরমেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারের স্নাতক এনভিডিয়ার এ-১০০ চিপের একটি বিশাল মজুত সংগ্রহ করেছিলেন। তবে এই চিপ এখন চীনে রপ্তানি নিষিদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনুমানিক ৫০ হাজার চিপের মালিক হয়েছিলেন ওয়েনফেং। এই চিপগুলোর সঙ্গে সস্তা চিপ মিলিয়ে ব্যবহার করেই তিনি ডিপসিক প্রতিষ্ঠা করেন।
ডিপসিক তাদের এআই অ্যাপটি অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর এবং তাদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোডের জন্য উন্মুক্ত করে। গ্রাহকেরা বিনা মূল্যে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন। উন্মুক্ত করার পর দ্রুতই এটি অ্যাপলের স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপে পরিণত হয়। তবে, সাইন আপ করতে কিছু ব্যবহারকারী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ডিপসিকের শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট চ্যাটজিপিটির মতোই কাজ করে এবং এটিই এর জনপ্রিয়তার কারণ। অ্যাপ স্টোরের বিবরণ অনুযায়ী, ‘এটি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং জীবনকে আরও কার্যকরভাবে সহজ করতে’ ডিজাইন করা হয়েছে। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটি লেখাকে আরও বেশি মানবীয় গুণসম্পন্ন করে তোলে। ডিপসিক যুক্তরাষ্ট্রের এআই কোম্পানিগুলোর তুলনায় শত কোটি ডলার কম খরচে তৈরি করার করেছে। এই বিষয়টি এআই দুনিয়ায় মার্কিন প্রযুক্তির প্রাধান্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কম খরচে তৈরি করা এই অ্যাপটি সোমবার পুঁজিবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নাসডাক সূচক ৩ শতাংশের বেশি কমে যায়।
ডিপসিক তুলনামূলক কম শক্তিশালী চিপ ব্যবহার করে, যা এনভিডিয়ার উন্নত চিপগুলোর চেয়ে সস্তা। তাদের এই সাফল্য বড় বাজেট এবং উচ্চমানের চিপ ছাড়া এআই উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখিয়েছে, যা শক্তিশালী চিপের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে রয়েছে চিপগুলো। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নেতৃত্ব বজায় রাখতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ডিপসিকের এই সাফল্য নজর কেড়েছে সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের।