বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৪তম। আগের বছর এ অবস্থান ছিল দশম। বাংলাদেশের চার ধাপ এগিয়ে যাওয়ার কারণ, এ দেশে দুর্নীতি কমেছে তা নয়। বরং বাংলাদেশ স্কোর আরও কম পেয়েছে। ২০২৩ সালে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪, গত বছর পেয়েছে ২৩। মানে হলো, দুর্নীতি বাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এক কমেছে। কিন্তু অন্য দেশ আরও খারাপ করায় সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে ডেনমার্কে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মাত্রা ছিল দক্ষিণ সুদানে। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেসি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪’ প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর সময়পর্বের তথ্যের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।
টিআইবির জরিপ প্রকাশের বরাবরের মতো সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এবার সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি উঠবে না বলেই ধারণা। কেননা আলোচ্য সময়পর্বের জন্য বর্তমান সরকারের দায় নেই। সরকার আপত্তি করুক আর না-ই করুক; টিআইবি প্রতিবেদর সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। টিআইবির প্রতিবেদনে সংস্থাটির নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। বস্তুত এটি নাগরিক বিশেষ করে সেবাগ্রহীতাদের স্বেচ্ছায় দেয়া অভিমত মাত্র। দুদক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থা দুর্নীতির সংঘটনে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারি বজায় রেখে জরিপ করলেও একই ধরনের ফল উঠে আসবে।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, এ বছর স্কোর ও উচ্চক্রম অনুযায়ী অবস্থানের অবনমন হয়ে প্রমাণ করে গত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে, এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। এর আগে টিআইবি দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার তথ্য দেয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি কমাতে পরামর্শও দিয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে টিআইবি। দুই সংস্থার মধ্যে একাধিকবার সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তবু তেমন সুফল পাওয়া যায়নি। সত্যি বলতে সাবেক সরকার শূন্য সহনশীলতায় দুর্র্নীতি রোধে ব্যবস্থা নেয়নি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতিরোধে সোচ্চার। সংস্কার কমিশনও গঠিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার তদারকি বা জবাবদিহি ব্যবস্থায় যে ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কেউ যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে যে দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করবে, তখন তাকে প্রতিরোধ করতে হবে সর্বত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। অর্থ পাচারসহ আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে সংঘটিত অনেক বড় দুর্নীতি সামনে এলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে রাষ্ট্র নীতিসহায়তা জোগাতে হবে।