যুক্তরাষ্ট্রে আয়ারল্যান্ডের রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ শতাংশ

ট্রাম্প প্রশাসনে গুরুত্ব পাচ্ছে আইরিশ বাণিজ্য

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য কমেছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালে আয়ারল্যান্ডের পণ্য রপ্তানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৭৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ৭ হজার ৫৮৭ কোটি ডলার হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হল যখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট একের পর এক দেশের ওপর বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করছেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আইরিশ বাণিজ্য। খবর: বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান।

আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (সিএসও) প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয়ারল্যান্ডের আমদানি কমে গেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয়ারল্যান্ডের আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৫১ কোটি ডলারে। এ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের পণ্য বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৫২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২২৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এ বাণিজ্য উদ্বৃত্তের প্রধান কারণ, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রস্তুতকারকরা। আয়ারল্যান্ডে উৎপাদিত বিপুল ফার্মাসিউটিক্যাল সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়ে থাকে। গত বছর মেডিকেল ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের মোট রপ্তানি ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪ দশমিক ১০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৪১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আয়ারল্যান্ডের মোট রপ্তানির ৪৫ শতাংশ ছিল এ পণ্য। রপ্তানি বৃদ্ধির এ হারের একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এলআই লিলি আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কর্কের এক কারখানায় তাদের ওজন কমানোর ওষুধ জেপবাউন্ড উৎপাদন করে। আয়ারল্যান্ডের কম করপোরেট কর হারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে কারখানা নির্মাণ করে।

ইউএস কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের গবেষক ব্র্যাড সেটসার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালে কংগ্রেসের ফাইন্যান্স কমিটিতে তথ্য সরবরাহকালে তিনি বলেন, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল আমদানির পরিমাণের কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা নেই যা কর এড়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডের প্রধান ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বহির্ভূত রপ্তানি গন্তব্য। রপ্তানি বাড়ার এ তথ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং শুল্ক আরোপের হুমকির আগে। এখন এই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আয়ারল্যান্ড। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নীতি উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে দেশটির। ট্রাম্প মনে করেন, যেসব দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সুযোগ নিচ্ছে। গত সপ্তাহে তিনি তার ‘ন্যায্য ও পারস্পরিক’ বাণিজ্য পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ পরিকল্পনা অনেক দেশের রপ্তানির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক বা আমদানি কর আরোপের পথ খুলে দিতে পারে।

ট্রাম্প কানাডা, তাইওয়ান ও ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘বাণিজ্যে একেবারে নিষ্ঠুর’ বলে অভিহিত করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্যনীতি ‘একচেটিয়া ক্ষমতা’ হিসেবে পরিচিত; যার অর্থ শুধু ইইউ বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা করতে এবং শুল্ক আরোপ করতে পারে, একক দেশগুলো নয়। তবে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত দেননি, তিনি ইইউ দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ডকে আলাদা করবেন কি না।
এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে ২০২৪ সালে বাণিজ্য কমেছে ৬ বিলিয়ন ইউরোর বেশি। আইরিশ সাগের ব্রেক্সিট পরবর্তী শিপমেন্ট জটিলতাকে এজন্য দায়ী করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্য গত বছর রপ্তানি–আমাদানি কমেছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ইউরো। তবে এ হিসাব ২০২৩ সালের তুলনায় কম, সে বছর দুই দেশে ৩৮ বিলিয়ন ইউরো বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়।
আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি থেকে যুক্তরাজ্যে কেমিক্যাল রপ্তানি ৩ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। শিপমেন্টের কারণে গ্যাস ও লুব্রিকেন্টের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউরো। সামগ্রিকভাবে, বার্ষিকভিত্তিতে ২০২৪ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ১০ শতাংশ। একই সময় ব্রিটেন থেকে আয়ারল্যান্ডে আমদানি ২১ শতাংশ কমে গেছে।