নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন: সেনাপ্রধান

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আজ রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।

সবাইকে এক থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলতে পারবেন না যে সতর্ক করিনি। হানাহানি না করে দিন শেষে দেশ ও জাতির দিকে খেয়াল করে এক থাকতে হবে। যদি নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।”

২৫ ফেব্রুয়ারিকে গভীর শোকের দিন হিসেবে বর্ণনা করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা ঘটিয়েছে। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য এতে জড়িত ছিল না। এ বিষয়ে কোনো ‘যদি’ বা ‘কিন্তু’ থাকা উচিত নয়। যদি আপনি এটা প্রশ্ন করেন, তবে আপনি গত ১৬-১৭ বছর ধরে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারেন। দোষী ব্যক্তিরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে।”

বিডিআর বিদ্রোহে বিদেশী বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “একটি কমিশন এই বিষয়টি তদন্ত করবে এবং তাদের প্রতিবেদন শেয়ার করা হবে।”

যারা নিজেদের প্রতি অবিচার হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন, তাদের বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “লেফটেন্যান্ট জেনারেল নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যেটি এমন সব মামলা পর্যালোচনা করবে। প্রথম পর্বে ৫১ জনের বিষয়ে সুপারিশ আমার কাছে জমা পড়েছে, যেগুলোর অধিকাংশ আমি অনুমোদন করেছি, এবং আমি নিজেও আরও কিছু সুপারিশ করেছি।”

তিনি আরও জানান, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও একই ধরনের পর্যালোচনা প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, যাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাদের জন্য কোনো ছাড় থাকবে না। “এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী, এবং এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে হবে।”

সেনাপ্রধান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ আমরা নিজেরা হানাহানিতে ব্যস্ত। আমরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা অপরাধীদের জন্য চমৎকার সুযোগ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে, একত্রিত থাকলে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই অতীতে খারাপ কাজের সঙ্গে ভালো কাজও করেছে। দেশ যে এত বছর স্থিতিশীল ছিল এটার কারণ হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সিভিলিয়ান সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইফেক্টিভ রেখেছি। সে জন্য এতদিন সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি।”

ওয়াকার-উজ-জামান আরো বলেন, “এর মধ্যে যারা অপরাধ করেছে, তাদের অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। নাহলে এ জিনিস আবার ঘটবে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমরা এমনভাবে কাজ করব এসব সংস্থা যেন আন্ডারমাইন (ছোট করে দেখা) না হয়।”

তিনি বলেন, “আজ অনেক পুলিশ কাজ করছে না। এর বড় কারণ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিকড (আতঙ্কগ্রস্ত)। বিভিন্ন দোষারোপ, গুম, খুনের তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত হবে দোষীদের তদন্তের আওতায় আনতে হবে। তবে তা এমন ভাবে করতে হবে যেন সংস্থাগুলো আন্ডারমাইন না হয়। সংস্থাগুলোকে এমনভাবে আন্ডারমাইন করে আপনারা যদি মনে করেন দেশে শান্তি ফিরবে, তাহলে এটা হবে না। সম্ভব নয়।”

দেশের শান্তি শৃঙ্খলার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর নয় উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, “দুই লাখ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র‌্যাব আছে, আনসার ভিডিপি আছে। আমার আছে ৩০ হাজার সৈন্য। এ ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে এই ভয়েড (শূন্যতা) আমি কীভাবে পূরণ করব? ৩০ হাজার থাকে, আবার ৩০ হাজার চলে যায় ক্যান্টনমেন্টে। আবার ৩০ হাজার আসে। এটা নিয়ে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিপরীতমুখী কাজ করলে দেশে কখনো শান্তি শৃঙ্খলা আসবে না। জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।”