কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করজাল সম্প্রসারণ করুন

বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে, তবে বাস্তবে তা বাড়ানোর জন্য তেমন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। সর্বশেষ আইএমএফের চাপে গত জানুয়ারি বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর তথা ভ্যাট বাড়ানো হয়। তবে বিভিন্ন পক্ষের চাপে তা আবার কিছু ক্ষেত্রে হ্রাস করাও হয়। তবে কর-জিডিপি বৃদ্ধি এটি কখনই কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে না।

ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এক্ষেত্রে সহজপথে হাঁটার চেষ্টা করেছে। যদিও কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ কর ও করজাল সম্প্রসারণ করা জরুরি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, দেশে টিআইএনধারীর (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সংখ্যা এক কোটি চার লাখ। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছর কর দিয়েছে মাত্র ৪৩ লাখ। অর্থাৎ প্রায় ৫৯ শতাংশ টিআইএনধারী কর দেননি।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘কর-জিডিপি অনুপাতে বিশ্বে তলানিতে বাংলাদেশ!’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি অনেকেরই নজরে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেটাবেজের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বনিম্ন। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে কম কর-জিডিপি অনুপাত দারিদ্র্যপীড়িত সুদানের। দেশটির কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়ায় মাত্র ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের কর-জিডিপি অনুপাত ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তৃতীয় সর্বনিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত যুদ্ধবিদ্ধস্ত হাইতির। দেশটির কর-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৩০। তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ ইপিওপিয়া। দেশটির কর-জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশের চেয়ে সামান্য বেশি ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। আর পশ্চিম আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ নাইজেরিয়ার কর-জিডিপি অনুপাত ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। কর-জিডিপি অনুপাত ১০-এর নিচে রয়েছে এই ছয়টি দেশের। অন্যান্য দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ১০-এর বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি পরিস্থিতি শুধু লজ্জাজনক না, উদ্বেগজনকও। কারণ উন্নয়নশীল দেশের যে কাতারে আমরা উঠতে যাচ্ছি এবং এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ইত্যাদি খাতে যে পরিমাণ বাড়তি বরাদ্দ দরকার, সংকটের কারণেই সেই পরিমাণ অর্থ সরকার বরাদ্দ দিতে পারছে না।

কর-জিডিপি অনুপাত কম হওয়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ধনীর কাছ থেকে আয়কর না নেয়া। আয়কর দেয়ার যোগ্য অনেক লোক থাকলেও সরকার তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না বা পৌঁছাতে চাচ্ছে না। এর এক নম্বর কারণ, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। এদিকে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ট্যাক্স আদায় কম হওয়ার কারণ হচ্ছে, ট্যাক্স বেইসটা বড় না। রাজস্ব আহরণের জন্য আমরা নির্ভর করি ভ্যাটের ওপর। সেটাতে সারা বছরই তাদের ওপর চাপ পড়ে। এই ভ্যাট সারা বছর আদায় হয়, বিষয়টা তেমনও না। এছাড়া সারা বছর যে ট্যাক্স আদায় হয় তা বেশ বড় না। আবার যারা ডিরেক্ট ট্যাক্স দেন, যারা কমপ্লায়েন্স, তারা দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেশির ভাগ লোকই ট্যাক্স দিচ্ছে না। ওইখানে আমাদের ট্যাক্স নেট বাড়ানো দরকার। তাই ট্যাক্স নেট বাড়িয়ে সরকারের উচিত কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর প্রতি জোর দেয়া।