শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন তার মধ্যে একজন হলেন গত বছরের নভেম্বরে নিয়োগ পাওয়া জনতা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. মুজিবর রহমান। ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব রূপালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি তার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৮ সালে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করার পরই বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। এর সুবাধে তিনি ডিজিএম থেকে সবার আগে জিএম পদে পদোন্নতি পান। তিনি রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিসের জোনাল হেড, বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান এবং ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক থাকাকালীন মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রূপালী ব্যাংক শাখার উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অনুমদিত উপদেষ্টা পরিষদের তালিকায় তার নাম ৪ চার নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি গর্ববোধ করতেন। এমনকি তিনি বলতেন যে, তার বাবা-মা পছন্দ করে বঙ্গবন্ধুর নামে তার নাম রেখেছেন মজিবুর রহমান। খবর: বাণিজ্য প্রতিদিন
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবুর রহমান। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মজিবুর রহমান বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যে, বনোয়াট ও ভিত্তিহীন। প্রথমত: আমার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার নামের বর্ণনা সঠিক নয়। আমি কখনো কোন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করিনি। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে ন্যায়, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে এ পর্যন্ত মহান রাব্বুল আলামীন বর্তমান সম্মান দান করেছেন। ১৫ আগস্টের জাতীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ রাষ্ট্রীয়ভাবে যা নির্ধারিত ছিল তা করা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমার জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো। জানা গেছে, মো. মজিবুর রহমান ২০২১ সালের ২ নভেম্বর সোনালী ব্যাংক পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) যোগদান করেন।
অভিযোগ রয়েছে, সোনালী থেকে সকল নিয়ম কানুন ভেঙে তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে ৯৮ ব্যাচের সবার আগেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ পান। আর এর পেছনেও রয়েছে দলীয় আনুগত্য। মূলত দলীয় আনুগত্যের কারণেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এত দ্রুত পদোন্নতি দিয়েছিল। এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি হওয়ার পরও তিনি তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগের একজন নিষ্ঠাবান লোক। এমনকি ১৫ আগস্টে শোক দিবসেও তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, শোকাবহ আগস্ট। জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। ১৫ আগস্টে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়ে মজিবুর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও তিনি রিপ্লাই দেন নি।
এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে থাকাকালীন তিনি একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর নামে নেয়া প্রোডাক্টগুলোর নামও বলেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ প্রোডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু সঞ্চয়ী স্কিম, বঙ্গবন্ধু ডাবল বেনিফিট স্কিম এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষা সঞ্চয়ী স্কিম চালু করেছিলেন তিনি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মজিবুর রহমান নিজেই আগ্রহী হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি রাখতে বঙ্গবন্ধুর নামে এসব প্রোডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছিলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্যদের মতো মজিবুর রহমানও নিজেকে আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগেন। অভিযোগ রয়েছে, জনতার এমডি হতে তিনি বৈষম্যবিরোধীদের সাথেও যোগযোগ করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজের রূপ পরিবর্তন করতে সক্ষমও হন।
জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করার পর সরকারের একটি সংস্থা তার বিষয়ে খবর নিয়ে দেখেছেন যে বিগত সরকারের সাথে তার খুব নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তার সব পদোন্নতি সরকারের নির্দেশেই হয়েছিল। এই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, জনতা ব্যাংকের এমডি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার কোন প্রচেষ্টা ছিল না। আমার পিআরএলসহ প্রায় ৪ বছর গ্রেড -১ পদে নিয়মিত চাকরি ছিল। ফলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি ও ঝুঁকিগ্রস্থ হয়েছি। যার দরুন নিয়োগ পাওয়ার অনেক পরে বাধ্য হয়ে জয়েন (যোগদান) করেছি।