চট্টগ্রাম বন্দরে তীব্র কনটেইনার জট

অতিরিক্ত ১০ হাজার কনটেইনারের চাপ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৩১ হাজার ১৭৪ টিইইউএস কনটেইনার ছিল। আর ঈদের টানা ছুটি শেষে গতকাল বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে প্রায় ৪১ হাজার টিইইউএস কনটেইনার জমা ছিল। সাপ্তাহিক ও ঈদের ছুটি মিলিয়ে প্রায় ১০ দিনের বন্ধে বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কনটেইনার। এ সময়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, আমদানি ও রপ্তানিবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ডেলিভারি কম হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশই দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়। এর মধ্যে শিল্পপণ্য, শিল্পের কাচাঁমালসহ কনটেইনারের আনা রকমারি পণ্যসামগ্রী আমদানি এবং দেশের উৎপাদিত পোশাক খাতের পণ্যসামগ্রীসহ পণ্য কনটেইনারে রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) কার্গো স্থানান্তর করে পরিবহন করা হয়। এ দুই ধরনের প্রক্রিয়ায় আমদানি করা পণ্য খালাস হয়। প্রতিদিন গড়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় তিন হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। আর বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার সক্ষমতা আছে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস। এর বিপরীতে গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত বন্দরের কনটেইনার ছিল ৪০ হাজার ৯৪৮ টিইইউএস কনটেইনাল, যা গত ২৫ মার্চের ৩১ হাজার ১৭৪ টিইইউএস। অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস, সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ঈদের আগে ও পরে মোট পাঁচ দিন ছুটিসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১১-১২ দিনের টানা বন্ধের কারণে বন্দরের ইয়ার্ডে ৯ হাজার ৭৭৪ টিইইউএস কনটেইনার জমে যায়।

বর্তমানে বন্দরের কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় থাকা ১৯টির মতো কনটেইনার জাহাজ অলস বসে আছে। এসব জাহাজে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার আছে। আপাতত কনটেইনার নামানোর কাজ বন্ধ আছে। ফলে বন্দর থেকে সময়মতো আমদানি কনটেইনারবাহী পণ্য খালাস স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় অনেক কম খালাস হচ্ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি করা কার্গোবোঝাই জাহাজ আছে ২৫টি। এর মধ্যে ১৬টি বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) কার্গো স্থানান্তর করা হচ্ছে। বাকি ৯টি জাহাজ থেকে কোনো পণ্য খালাস করা হচ্ছে না। এ ছাড়া আরও ১১টি তেলবাহী জাহাজ, ফাড গাইন পাঁচটি ও দুটি চিনিবাহী জাহাজ অলস বসে ছিল।

বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের টানা বন্ধের সময় বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির ক্ষেত্রে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংরের কম কনটেইনার ডেলিভারি নেয়া হয়। এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ মাত্র ৮০৯টি কনটেইনার ডেলিভারি হয়ছিলো। এরপর ১ এপ্রিল একটি কনটেইনারও ডেলিভারি হয়নি। এরপর ২ এপ্রিল ৬৯১টি, ৩ এপ্রিল ৫৪৪ টিইইউএস, ৪ এপ্রিল ১১০০ টিইইউএস এবং ৫ এপ্রিল ১৩৯৭ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি নেয়া হয়। এখন ব্যাংক, অফিস-আদালত ও কারখানা চালু হওয়ায় ডেলিভারির হার বেড়েছে। আশা করছি, কনটেইনার ডেলিভারিতে কোনো সংকট হবে না। 

আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, ঈদের টানার বন্ধের কারণে কারখানা বন্ধ ছিল। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে সাময়িক চাপ দেখা দেবে। তবে এখন কারখানা ও ব্যাংক চালু হওয়ায় দ্রুত সময়ে কনটেইনার খালাস নেওয়া হবে। ফলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। আর বর্তমানে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের জোগান বাড়ায় আমদানি ও রপ্তানি দুটিই বেড়েছে। এতে কনটেইনার ও কার্গো পণ্যের পরিমাণ বেড়েছে।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার শেয়ার বিজেকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের আমদানি ও রপ্তানি দুটোই সেøা আছে। বন্ধের কারণে কয়েক দিন কনটেইনার ডেলিভারি সেøা ছিল। এখন ব্যাংক ও কারখানা চালু হওয়ায় কনটেইনার ডেলিভারি গতিশীল হবে। তবে এেেত কনটেইনার জট সৃষ্টি হবে না।

সাম্প্রতিক আলাপকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিয়াল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। গত কয়েক বছরের নতুন নতুন ইয়ার্ড সম্প্রসারণ, আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংযোজন, আগের চেয়ে বেশি ড্রাফটের জাহাজ আগমন, দ্রুত ডেলিভারি কার্যক্রমের কারণে জাহাজগুলো অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দর ত্যাগ করতে পারছে। ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টিইইউএস ও কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ মেট্রিক টন, যা বন্দরের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হ্যান্ডেলিং রেকর্ড।