বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না; কারণ এর চেয়ে ভালো বিকল্প রয়েছে তাদের কাছে। আবার এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। বড় বাধা নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও বিনিয়োগ না আসার অন্যতম কারণ। বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে এফবিসিসিআই আয়োজিত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তীকালে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগকৌশল নিয়ে প্যানেল আলোচনায় দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীরা এমন অভিমত দেন।
বক্তারা আরও বলেছেন, শিল্পের জন্য এখন অতিরিক্ত দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রয়েছে অসামঞ্জস্য। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তারা।
আমরা মনে করি, বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতির ধারাবাহিকতা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে নীতির সমন্বয় থাকা অত্যাবশ্যক। অংশীজনদের সমন্বয় না থাকলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শুধু আশ্বাসের ভিত্তিতে বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগ করবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা! আমাদের চেয়ে ভালো বিকল্প থাকলে সেদিকেই ঝুঁকবেন তারা।
আমাদের উচিত হবে পণ্য ও গন্তব্য ধরে ধরে বাজার ও পণ্য সম্প্রসারণে মনোযোগ দেয়া। আধুনিক বিশ্বে কোনো দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশও প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ, কারখানা স্থাপন প্রভৃতিতে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করতে কর অবকাশসহ বিভিন্ন সুযোগ দেয়। বিশ্বের যে কোনো পুঁজিবাজারে বৈদেশিক লেনদেনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাজারটির ভিত্তি মজবুত করে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতেও ব্যবস্থা নেয় উন্নত দেশগুলো।
বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ অনেক। প্রতি বছর বিনিয়েগ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে বা হয়ে থাবে সরকার বেসরকারি বিনিয়োগে সহায়ক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কার করেছে। কিন্তু কতটা সুফল দিচ্ছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন না করলে তা থেকে কতটা সুফল পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, তা বোঝা যাবে না।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পথে বাধা থাকলে সেগুলোও চিহ্নিত করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, সেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালোভাবে পর্যালোচনা করেন। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাতে অবকাঠামোগত দুর্বলতায় প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যে নেতিবাচক সংবাদের জন্যও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থান পায় বাংলাদেশ। সুশাসন ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বড় ভূমিকা রাখবে। বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতির ধারাবাহিকতা, সুশাসনেও গুরুত্ব দিতে হবে।