গত বছর বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি পাওয়ার পর ২০২৪ সালে দেশের সরকারি বিদেশি ঋণ ৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষে সরকারের বকেয়া বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে অন্তত ৮৪ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

এছাড়াও বেসরকারি বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বকেয়া বিদেশি ঋণ কমেছে ৭৩৬ মিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা গত এক বছরে বিশ্বব্যাংক থেকে বাজেট সহায়তা তহবিল পেয়েছি। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বরেই পেয়েছি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া আইএমএফ ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকেও আমরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পেয়েছি। ফলে আমাদের পাবলিক সেক্টরে (সরকারি খাতে) ঋণ বেড়েছে।’

অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদেশি ঋণ নেয়ার সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত না করেই রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। আবার অর্থনীতিতে কী পরিমাণ প্রোডাক্টিভিটি (উৎপাদনশীলতা) যোগ করবে, তা ঠিকমতো মূল্যায়ন না করে কর্ণফুলী টানেল তৈরি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালে সরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে বেসরকারি খাতের ঋণ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ কেন কমছে, জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি কমেছে। এর একটি কারণ ২০২৩ সালে ডলার বাজারের অস্থিতিশীলতা। এছাড়া আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি ঋণ কমার একটি বড় কারণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে বেসরকারি খাত ২০২৪ সালে বেসরকারি খাত ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পেয়েছে। এর বিপরীতে মূলধন, সুদ ও কমিশনসহ মোট ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে।

বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের চাহিদা খুব বেশি কমেনি মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কান্ট্রি রেটিং কমিয়ে দেয়া, বিদেশি পেমেন্ট সময়মতো না করাসহ অনেক কারণে বিদেশি ঋণের সরবরাহ আগের তুলনায় কমে গেছে। ফলে বেসরকারি খাতে চাহিদা থাকলেও তারা সবসময় পর্যাপ্ত ঋণ পাচ্ছে না।’