গ্লুকোমা চোখের এক জটিল সমস্যা। দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা না হলে এতে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁঁকি থাকে। যেহেতু এ রোগে কোনো পূর্বসতর্কতা বা উপসর্গ থাকে না, তাই রোগটি কীভাবে শনাক্ত করা হয় বা অন্ধত্ব প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নিতে হয়, তার একটা সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৪০ থেকে ৮০-এর মধ্যে যাদের বয়স, তাদের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বিশ্বে প্রায় ৮ কোটি মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত। এশিয়ায় গ্লুকোমায় আক্রান্তের হার বেশি (৩ থেকে ৫ শতাংশ)।
গ্লুকোমা কি: গ্লুকোমা হলে চোখের প্রেশার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, যার দরুন চোখে দৃষ্টি পরিবাহী স্নায়ু বা অপটিক নার্ভ স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে অন্ধত্ব অবধারিত হয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় চোখের বাড়তি প্রেসারের কারণে কোনো উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে স্নায়ু অবশ হতে থাকে। একসময় স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় বছরের পর বছর সময় লাগে, কিন্তু তা নীরবে সংঘটিত হতে থাকে।
বেশি ঝুঁঁকিতে কারা: সাধারণত পারিবারিক প্রভাবে বেশির ভাগ রোগী আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই যাদের পরিবারে গ্লুকোমার ইতিহাস আছে, তারা অধিকতর ঝুঁঁকিপূর্ণ ব্যক্তি; ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। চল্লিশের পরই সাবধান হতে হবে; ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দূরদৃষ্টির সমস্যায় আক্রান্ত যারা, তাদের ঝুঁঁকি তুলনামূলক বেশি।
গ্লুকোমা নির্ণয়: ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের উচিত গ্লুকোমা আছে কিনা বা ভবিষ্যতে এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা, তা নিয়মিত যাচাই করে নেয়া। গ্লুকোমা শনাক্ত করার সহজ উপায়, চক্ষু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চোখের প্রেশার নির্ণয় করা। সঙ্গে স্নায়ুর অবস্থা জেনে নিতে ভিজুয়াল ফিল্ড টেস্ট করা।
পরামর্শ: গ্লুকোমা সাসপেক্ট বলে এক ধরনের রোগী আছেন। তাদের ভবিষ্যতে গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এমনটি হলে তাদের নিয়মিত ফলোআপ বা তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে; গ্লুকোমা সম্পর্কে সাধারণ সচেতনতা বাড়াতে এ সম্পর্কে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। কমিউনিটিতে শনাক্তকরণের জন্য প্রচুর স্ক্রিনিং বা শনাক্তকরণ প্রোগ্রাম করা প্রয়োজন; নিয়মিত চোখ পরীক্ষাই গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব নিবারণের উপায়। একবার শনাক্ত হলেই শুধু অন্ধত্ব প্রতিরোধের সুযোগ তৈরি হয়। তখন নিয়মিত চিকিৎসায় থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই অন্ধত্ব প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সম্ভব।
ডা. মো. ছায়েদুল হক
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মার্কস মেডিকেল কলেজ