প্রতিশোধের আবর্তে পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্ব ও বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান

খন্দকার আপন হোসাইন : সময়ে সময়ে রক্তের নদী বয়ে গেছে এই উপমহাদেশে। ১৯৪৭ সালে ভাগ হলো ভূখণ্ড। জš§ নিল দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত, কিন্তু মিলল না শান্তি। রয়ে গেল অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব। কাশ্মীর হলো জ্বলন্ত ক্ষত। যুদ্ধ হলো তিনবার-১৯৪৮, ১৯৬৫ ও ১৯৭১। বাংলাদেশের জš§ হলো শেষ যুদ্ধে। কিন্তু সমস্যা থেকেই গেল। সীমান্তে এখনও চলে গুলিবিনিময়। কূটনৈতিক আলোচনায় শীতল হয় না ক্ষোভ ও ঘৃণা। আসলে যুদ্ধ এমন একটি শব্দ যেখানে নির্মমতার সীমা থাকে না। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো আমাদের ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাক-ভারত কূটনৈতিক টানাপড়েন আচমকাই রূপ নেয় সশস্ত্র সংঘর্ষে। বাংলাদেশের অবস্থান ও ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের মানুষের মাঝে, পাক-ভারতে সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রভাব লক্ষ করা যায়। পাক-ভারত যুদ্ধের ডাক মানেই বাংলাদেশসহ সমগ্র উপমহাদেশের জন্য এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। পাকিস্তানের জন্মভূমি তত্ত্বে বাঙালির স্থান ছিল না। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে বাঙালিরা অংশ নিয়েছিল অনিচ্ছায়। পূর্ব পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ভারতীয় সেনাদের ভয় দেখানো হলো, কিন্তু কোনো লড়াই হয়নি এখানে। বাঙালিরা বুঝে গেল তাদের ভাগ্য পাকিস্তানের হাতেও নিরাপদ নয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হলো আওয়ামী লীগ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা দিল না পাকিস্তান। ইয়াহিয়া খান মিলিটারি অপারেশন শুরু করল। ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে নামল হত্যাযজ্ঞ। অপারেশন সার্চলাইটের নিষ্ঠুরতা দেখল বিশ্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও পিলখানায় লাশের স্তূপ। বাঙালিরা প্রতিরোধে নামল। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। ভারত এগিয়ে এলো সাহায্য নিয়ে। শরণার্থীরা পাড়ি দিল সীমান্ত। তাজউদ্দীন আহমদ গঠন করলেন প্রবাসী সরকার। মুক্তিবাহিনী গেরিলা যুদ্ধ শুরু করল। পাকিস্তানি সেনারা বাড়াল নৃশংসতা। গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনের মাধ্যমে ইতিহাস কলঙ্কিত করল তারা। বিশ্ববিবেক নীরব থাকল, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হাল ছাড়ল না। ডিসেম্বরেই এলো চূড়ান্ত বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করল। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু পাক-ভারত দ্বন্দ্ব থেমে থাকল না। সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো ১৯৭২ সালে। কাশ্মীর ইস্যু রয়ে গেল অমীমাংসিত। বাংলাদেশ এখনও এই দ্বন্দ্বের ছায়ায়। সীমান্ত হত্যা, জলবণ্টন ও গুপ্তচরবৃত্তিতে সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ হয়। পাকিস্তান কখনও মেনে নেয়নি ১৯৭১ সালের পরাজয়। তারা বাংলাদেশকে দেখে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ হিসেবে। ভারতের সঙ্গে তাদের শত্রুতা অটুট। বাংলাদেশকে তারা ফিরে পেতে চায়, কিন্তু বাঙালিরা ভুলে যায়নি ইতিহাস।

সম্প্র্রতি পেহেলগামের রক্তাক্ত মৃত্যুচিত্রে ফুটে উঠেছে এক নির্মম সত্য। কাশ্মীরের মাটি আজও শান্তির ছায়া থেকে বহু দূরে। ৩৭০ ধারা বিলোপের পরও হিংসার ছুরি থেমে নেই। পরিসংখ্যানের পাতায় কমেছে সংখ্যা, কিন্তু বেঁচে আছে আতঙ্ক। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলের ঘোষণায় উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনীতির অঙ্গনে। ১৯৬০ সালের সেই কাগজে স্বাক্ষর ছিল নেহরু-আইয়ুবের। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় জš§ নিয়েছিল এক আপসের ফর্মুলা। পূর্বের তিন নদী ভারতের, পশ্চিমের তিন নদী পাকিস্তানের। জলের হিসাব ছিল পরিষ্কার। কিন্তু এই চুক্তি বাতিল করায় পাকিস্তানের কী ক্ষতি হলো? প্রশ্নটা জ্বালাচ্ছে অনেককে। পাকিস্তানের ৬০ শতাংশ মানুষ নির্ভর করে সিন্ধুর জলে। কৃষি, পানীয় জল, বিদ্যুৎ-সবই ওই নদীবাঁধনের গর্ভে। কিন্তু ভারতের পক্ষে জল আটকানো কি সত্যিই সহজ? হিমালয়ের উঁচু পথে বাঁধ দিতে হবে। সময় লাগবে বছর পাঁচেক। খরচ হবে অকল্পনীয়। ফলাফল? প্রায় শূন্য। ভারতের চাষের জমি সেখানে নগণ্য। বিদ্যুৎ উৎপাদনও সীমিত। অর্থাৎ নিজের ক্ষতি করেই শত্রুর ক্ষতি করার ফর্মুলা। ২০১৬ ও ২০১৯ সালেও চুক্তি বাতিলের হুঙ্কার উঠেছিল। পাকিস্তান তখনই সতর্ক করে বলেছিল, এটা যুদ্ধের ইঙ্গিত। ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৯৯ এমনকি কার্গিল যুদ্ধেও জল নিয়ে টানাটানি হয়নি, কারণ বাস্তবতা বড় কঠিন। পাকিস্তানের পাল্টা জবাব এলো দ্রুত। সিমলা চুক্তি স্থগিত। আকাশসীমা বন্ধ। ভারতীয় বিমানগুলো এখন বাধ্য হচ্ছে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে। সময় বাড়ছে। জ্বালানি খরচ চড়ছে। ভাড়া বাড়বে যাত্রীদের। সিমলা চুক্তি ছিল শান্তির সেতু। ১৯৭২ সালে ইন্দিরা-ভুট্টো রেখেছিলেন তার ভিত্তি। আজ তা ভেঙে পড়ায় উত্তেজনা ছড়াবে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়। পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হলে ভারতের বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতি অনিবার্য। দিল্লি, অমৃতসর, লক্ষেèৗ থেকে আমেরিকাগামী ফ্লাইটগুলো এখন উলটোপথ খুঁজবে। প্রশ্ন উঠছে, এটা কি কৌশলগত বিজয় নাকি আবেগি প্রতিক্রিয়া? পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে হলে বিকল্প পথ ভাবতে হবে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? যুদ্ধ? কিন্তু যুদ্ধ মানেই অর্থনীতির ধস। বাজারে আতঙ্ক। বিনিয়োগের পলায়ন। কাশ্মীর আজও রক্তঝরা।

পেহেলগামের হামলা প্রমাণ করে, জঙ্গিদের তৎপরতা থামেনি। ৩৭০ বাতিলের পরিসংখ্যানে হিংসা কমলেও মূল সমস্যার সমাধান হয়নি। পাকিস্তান-ঘেঁষা গ্রুপগুলো সক্রিয়। তাদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। জলচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভক্ত বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলছেন, এটি প্রতীকী আঘাত। কারও মতে, দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি হবে ইসলামাবাদে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাকিস্তানের অর্থনীতি এরই মধ্যে ধুঁকছে। আইএমএফের সাহায্য নিয়ে টিকে আছে তারা। জল নিয়ে নতুন সংকট তাদের ভিত নাড়া দেবে। ভারতের ভাবনা কি শুধুই রাজনৈতিক, নাকি কূটনৈতিক চাল? মোদি সরকারের কঠোর বার্তাÑসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নমনীয়তা নেই। কিন্তু এর বাস্তব প্রভাব নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ দেখিয়ে দিয়েছে, তারাও পিছিয়ে যাবে না। সিমলা চুক্তি বাতিল তাদের জন্যও বড় ঝুঁকি। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তিই এবার প্রশ্নের মুখে। কাশ্মীরের মাটিতে শান্তি ফেরাতে হলে গভীর কৌশল দরকার। জলের চুক্তি বাতিল হয়তো প্রতিশোধের আগুন জ্বালাবে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান আনবে কি? উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। এখন শুধু অপেক্ষা। রক্তের হিসাব নিয়ে দুই দেশ দাঁড়িয়ে আছে চোরাবালির ওপর। একটু অসতর্কতায় ফাটল ধরবে সম্পর্কের ভিতে। সিন্ধুর জল বন্ধ হলে পাকিস্তানের ফসল শুকাবে। শহরে জলকষ্ট দেখা দেবে। কিন্তু ভারতকেও ভাবতে হবে নিজের ক্ষতির কথা। বাঁধ বানাতে বিপুল বিনিয়োগ। রক্ষণাবেক্ষণের চাপ। এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক লাভ কী? দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের জোয়ার আসবে। কিন্তু অর্থনীতির গতি ক্ষোভ ছড়াবে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ ভারতকে আরও বিচ্ছিন্ন করতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলে চাপ বাড়বে দুই দেশের ওপর। শান্তি আলোচনা দূরে সরে যাবে। যুদ্ধ নয় কূটনীতির পথই শ্রেয়। কিন্তু পেহেলগামের রক্তস্নাত মাটি চিৎকার করে উঠেছে- ‘প্রতিশোধ চাই।’ ভারত এখন রাগ আর যুক্তির দ্বন্দ্বে দ্বিধাহীন। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল হয়তো প্রতীকী জবাব, কিন্তু পাকিস্তানের ভিত না নড়ালে সবই বৃথা। কাশ্মীরের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। জলযুদ্ধের খেলায় জড়ালে শেষ পর্যন্ত ক্ষতি দুপক্ষেরই। পাকিস্তান এরই মধ্যে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, ভারতও ঝুঁকিতে। এখন সময় কূটনৈতিক চালের। শক্তিশালী জোট গঠন। পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো। পেহেলগামের শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। কিন্তু তা যেন অন্ধ প্রতিশোধের আগুন না হয়ে যায়। ভারতে এখন প্রয়োজন ঠান্ডা মাথার সিদ্ধান্ত। সিন্ধুর জল থেমে গেলে পাকিস্তানের মরুভূমি প্রসারিত হবে, কিন্তু ভারতকেও খেয়াল রাখতে হবে নিজের ভবিষ্যতের কথা। শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জনের পথ কণ্টকাকীর্ণ, কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রয়োজন দূরদর্শিতা। আবেগ নয়, যুক্তি দিয়ে পাকিস্তানকে চাপে রাখা।

জলচুক্তি বাতিলের মধ্য দিয়ে ভারত বার্তা দিয়েছে। সহনশীলতার মাত্রা শেষ। এবার পালা পাকিস্তানের। কাশ্মীরের আকাশে আজও ধোঁয়া। মাটিতে লাশের গন্ধ। সিন্ধুর জল কি ধুয়ে দেবে এই কলঙ্ক, নাকি তৈরি করবে নতুন অধ্যায়? ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ। যুদ্ধ নাকি কূটনীতি, পথ এখন চৌমাথায়। প্রতিশোধ নয় স্থিতিশীলতাই কাম্য। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও অবস্থানও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে সম্পর্ক তো আছেই, আবার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ইতিহাসও আমাদের আজও টানছে। এই দুই শক্তির মাঝখানে বসে থাকা আমাদের জন্য এক অবিস্মরণীয় চ্যালেঞ্জ। সামরিক প্রস্তুতি, অস্ত্রসজ্জা ও প্রতিরক্ষা শক্তি নিয়ে আমরা সবসময় ভাবনা-চিন্তা করি। আমরা যদি পাকিস্তান ও ভারতের সংঘর্ষের দিকে তাকাই, তবে দেখি যে তাদের কৌশলগুলো কখনও কখনও রূপ নেয় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে। কখনও আমেরিকা, কখনও রাশিয়া- এরকম দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। যখনই কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক পরিণতি লক্ষ করা যায়। এর ফলে বাংলাদেশও এক অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ প্রায়ই ছড়িয়ে পড়ে, এটি যে কোনো মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা বেড়ে যায়। বাংলাদেশ এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের দেশ যে কোন সময়ে এর প্রভাব গ্রহণ করতে পারে, তা বলা যায় না। কেননা শীর্ষ পরমাণু শক্তি থাকা দেশের যেকোনো চরম উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার ছোট রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও অনেকগুলো অঘোষিত লাইন রয়েছে। এসব রূপরেখায় বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি শান্তির দিকে ধাবিত হলেও দুই পরমাণু শক্তির মধ্যে অস্থিরতা আমাদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও পরমাণু শক্তির যেকোনো ক্ষুদ্র সংঘর্ষও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে। প্রথাগত সামরিক শক্তির বাইরে কূটনৈতিক মঞ্চে উপস্থিতি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। পাক-ভারত যুদ্ধের সম্ভাবনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কৌশলকে আবার পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপক প্রভাবের মধ্যে আমাদের সুশৃঙ্খল মনোভাব ও সতর্ক কূটনীতি ভবিষ্যতের জন্য বিশাল এক শক্তি হতে পারে। তবে এ যুদ্ধের ডাক বাংলাদেশের জন্য চরম সতর্কতা ও প্রজ্ঞার ইঙ্গিত। বাংলাদেশ কখনোই এই যুদ্ধের ছোবল থেকে মুক্ত নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, শক্তির ভারসাম্য ও সমঝোতার মাধ্যমে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংঘর্ষের অবসানই সর্বোচ্চ লক্ষ্য। সিন্ধুর জল যেন শান্তির স্রোত হয়, রক্তের নদী নয়। ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। কিন্তু সম্পর্কে টানাপড়েন থেকেই যায়। সীমান্ত হত্যা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, বাণিজ্য ঘাটতি প্রভৃতি বিষয়গুলো জটিল। বাংলাদেশ চায় স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, পাক-ভারত দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। কিন্তু ভূ-রাজনীতির চাপ এড়ানো কঠিন। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। দুই পরাশক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা চাই। অস্ত্রের ঝনঝনানি থামেনি এখানে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তি অর্জন করেছে। ভারতও পারমাণবিক শক্তিধর। দক্ষিণ এশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চল। শত বিপদের মাঝেও বাংলাদেশ শান্তি চায়, কিন্তু যুদ্ধের ডাক আসে বারবার। কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়ে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যায়। এ সবকিছু এড়িয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উন্নতি ঘটছে। কিন্তু পাক-ভারত দ্বন্দ্বের ছায়া দীর্ঘ। শান্তি চাইলে ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সত্য। কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে সংঘাত এড়াতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তার নিজের হাতে। অমীমাংসিত যুদ্ধের ডাকে সাড়া দেওয়া যাবে না। শান্তিই একমাত্র পথ।

লখক: শিক্ষক, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল, শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল