ডা. সিয়াম আল ইসলাম : জন্মগত হৃদরোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে এতে বংশগত প্রভাব রয়েছে। পরিবারে কারও জন্মগত হৃদরোগ থাকলে শিশুর ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস, রুবেলা ভাইরাস সংক্রমণ, কিছু ওষুধ সেবন, ধূমপান বা মাদক সেবনও শিশুর হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একটি সুস্থ হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ বা চেম্বার থাকে। এগুলো হলো ডান অলিন্দ ও নিলয়, বাঁ অলিন্দ ও নিলয়। হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ দূষিত রক্ত ফুসফুসে পাঠায়, যেখানে রক্ত পরিশোধিত হয়ে বাঁ পাশ দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। জন্মগত হৃদরোগে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক গঠন ও কাজ বিঘ্নিত হয়।
প্রকারভেদ: জন্মগত হৃদরোগকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- ১. সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ; ২. এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজ।
সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত দূষিত রক্ত হƒৎপিণ্ডের ছিদ্র দিয়ে বিশুদ্ধ রক্তে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রোগীর ত্বক, ঠোঁট, নখ ও জিহ্বা নীলচে হয়ে যায়। এসব শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় বা কান্নাকাটি করলে নীলাভ ভাব বৃদ্ধি পায়।
এসায়ানোটিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের রং স্বাভাবিক থাকে। কারণ বিশুদ্ধ রক্ত দূষিত রক্তে মিশে ফুসফুসে ফিরে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এসায়ানোটিক হৃদরোগ সায়ানোটিকে রূপ নিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাকে জটিল করে তোলে।
লক্ষণ: হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক দ্রুত বা ধীর হওয়া; দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস; ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (সর্দি-কাশি লেগে থাকা); বয়স অনুযায়ী ওজন না বাড়া; অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি বা খেলায় অনীহা; বুকের দুধ খেতে কষ্ট হওয়া বা খাওয়ার সময় ঘামা; ঠোঁট, জিহ্বা বা নখ নীল হয়ে যাওয়া; কান্নার সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
রোগনির্ণয়: বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক মানের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা-সুবিধা রয়েছে। জন্মগত হৃদরোগ শনাক্ত করতে সাধারণত বুকের এক্স-রে, ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়। এই তিন পরীক্ষার মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় সম্ভব। তবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি একজন অভিজ্ঞ জন্মগত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত।
চিকিৎসা কী: কিছু হৃদরোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। অস্ত্রোপচার ছাড়াও ক্যাথেটারভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন- সেপ্টাল অক্লুডার ব্যবহার করে ছিদ্র বন্ধ করা সম্ভব।
লেখক: জন্মগত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।