সময়মতো নিলাম হচ্ছে না

সাড়ে ৯ হাজার কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের বোঝা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করার বিধান রয়েছে। কখনও কখনও আমদানি করা কনটেইনার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত সময় বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে থাকে। তখন আইন মেনে নিলামযোগ্য কনটেইনারের পণ্য নিলামে বিক্রি করতে পারে কাস্টমস হাউস। কিন্তু নিয়ম থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পরিপালন হচ্ছে না। সময়মতো নিলাম না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ হাজার ৪০৫ একক কনটেইনার পড়ে আছে। এরমধ্যে ১০ বছর আগের পুরোনো কনটেইনারও আছে। এ কনটেইনারগুলো এখন বন্দরের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের অকশন ইয়ার্ডে নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল সাত হাজার ৭০৮ টিইইউএস। ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল পাঁচ হাজার ৪৪১টি এবং ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ছিল চার হাজার ৬০টি কনটেইনার। অর্থাৎ আট বছরের পাঁচ হাজার ৩৪৫ একক কনটেইনার বেড়েছে। প্রতিবছর আমদানিকৃত কনটেইনার ভর্তি পণ্য খালাস না নেয়ায় বাড়ছে নিলামযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা। এসব কনটেইনারের মধ্যে রেফার কনটেইনার ও ড্রাই কনটেইনার আছে। এতে নিলামযোগ্য ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য রয়েছে।

সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চার দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ রয়েছে। এরপর ২০ ফুট লম্বা সাইজের একটি কনটেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ছয় মার্কিন ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহ প্রতিদিন ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের। একইভাবে ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনারের ক্ষেত্রে এর দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। যেমন চার দিন পর থেকে পরবর্তী সাত দিন ৪০ ফুট কনটেইনারে ১২ ডলার, এরপর ২১ দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার, ২১ দিন পর থেকে ৪৮ ডলার স্টোর রেন্ট গুনতে হয়।

অপরদিকে অনিয়মিতভাবে নিলামযোগ্য কনটেইনার ও গাড়ি নিলাম করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এর মধ্যে রয়েছে নষ্ট গাড়ি, কাপড়, পেঁয়াজ, আদা, আপেল, ড্রাগন ফল, কমলা, আঙুর, হিমায়িত মাছ, মহিষের মাংস, মাছের খাদ্য, লবণ, রসুন, সানফ্লাওয়ার অয়েল, কফি ইত্যাদি।

কনটেইনার ছাড় নেওয়ার বিষয়ে একাধিক আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বলেন, বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী, খাদ্যশস্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয়। কিন্তু কতিপয় আমদানিকারক নিদিষ্ট সময়ে পণ্যবাহী কনটেইনার খালাস নিতে পারে না। এরই মধ্যে সঠিক সময় পণ্য খালাসের কাগজ সাবমিট না করা, আমদানিমূল্য চেয়ে সেল ভ্যালু কম হলে কিংবা আইনি জটিলতা থাকলে। আবার অর্থপাচারের বিষয় থাকলে তখন আমদানিকারকের পণ্য খালাসে অনাগ্রহ থাকে। এক্ষেত্রে এনবিআরকে সতর্ক থাকতে হবে।

ব্যবহারকারীদের দাবি, আমদানির পর সাধারণত আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চালানের যাবতীয় নথি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আমদানিকারককে পণ্য খালাসের জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেয় কাস্টমস। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাসের ব্যাপারে আমদানিকারক সাড়া না দিলে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস তা নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ধারা ৮২ মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে অখালাসযোগ্য পণ্য নিলামে বিক্রি কিংবা ধ্বংস করতে পারে কাস্টমস হাউস। কিন্তু সময়মতো নিলাম করতে ব্যর্থ হয় কাস্টমস। যদিও দ্রুত নিলাম করলে সরকারের রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি বন্দরের অতিরিক্ত কনটেইনার রাখার সক্ষমতা বাড়বে।

সম্প্রতি আলাপকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিয়াল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, সময়মতো ডেলিভারি না নেয়ায় বন্দরের শেড ও ইয়ার্ডে লোহার বক্স, রাসায়নিক পণ্য এবং নিলামযোগ্য কনটেইনার পড়ে আছে। এ-জাতীয় পণ্য বন্দরের জন্য ঝুঁিকপূর্ণ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। গত আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ৬১৭ কনটেইনার পণ্য বিনষ্ট এবং ৬৪০ কনটেইনার পণ্য অপসারণ করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর ৩০৪টি নিলামযোগ্য গাড়ি বন্দর থেকে সরানো হয়। এ ধরনের কাজ গত ১৫-১৬ বছরে হয়নি। তা আমরা করেছি মাত্র কয়েক মাসে। এসব কারণে মেইনলাইন অপারেটরগুলো আমাদের প্রশংসা করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারের ব্যবহƒত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে একই ডেপুটি কমিশনার (নিলাম) সেলিম রেজার ব্যবহƒত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।