বিদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় তদারকি বাড়ান

কোন ব্যাংকগুলো দেশের বাইরে অফিস বা শাখা খুলতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে শুধু ভালো ব্যাংকগুলোই বিদেশে ব্যবসা করতে পারবে। যদিও দুর্বল হয়ে পড়া অনেক ব্যাংকের বিদেশে শাখা কার্যক্রম রয়েছে। বিদেশে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ব্যবসা করা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা দিয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার ঘটেছে। এ জন্য লেনদেন সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য দেশের কোনো ব্যাংক ২০০১ সাল থেকে বিদেশে শাখা, ফাইন্যান্স কোম্পানি, এক্সচেঞ্জ হাউস, প্রতিনিধি অফিস প্রভৃতি স্থাপন করে বিদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দেশের গ্রাহকদের আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বিদেশে তাদের বিভিন্ন সহযোগী কোম্পানি স্থাপনের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির বাস্তবতায় ব্যাংক খাতে অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন পণ্য ও সেবার প্রচলন ঘটেছে। তবে বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওভারসিস ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি আত্তীকরণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ও এ-সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়নের বিষয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মনিটরি অথরিটি তথা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ রাখলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। কারণ বিদেশে কর্মরত ব্যাংকসেবা অর্থ পাচারের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে পরিণত হতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার যথাযথ তদারকির অভাবে।

প্রায়ই শোনা যায়, কারণে-অকারণে পরিচালকরা ব্যাংকারদের কাজে হস্তক্ষেপ করেন। ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে। বিশেষ করে পরিচালনা পর্ষদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এমডি ও ডিএমডি) স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে নাÑএ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখন এ খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সুশাসনের অভাব। অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন বলতে কিছু নেই। ব্যাংক খাতের জন্য যে নীতিমালা, আইন-কানুন, আন্তর্জাতিক রীতি আছে আমাদের দেশে যথাযথ অনুসৃত হয় না। এটি স্বীকার করতেই হবে।

পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে দূরত্ব থাকলে জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক বা চেয়ারম্যান হয়ে আসেন, তাদের নিজস্ব স্বার্থ কিংবা নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য থাকে। অনেক সময় আত্মীয়স্বজনের ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংক ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে থাকেন তারা। এরাই কৌশলে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। নতুন প্রজ্ঞাপন যথানিয়মে বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিবিড় তদারকি ছাড়া সুফল মিলবে না।