তামহা সিকিউরিটিজের বাড়ি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ. খতিয়ে দেখতে দুদকে বিএসইসির চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত বিতর্কিত ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ট্রেক নম্বর-০৮১)-এর বিরুদ্ধে ফের অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে গুলশানের একটি বাড়ি বিক্রি করে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং এই কাজে তৃতীয় পক্ষের সহায়তার অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিএসইসিতে দাখিল করা এক চিঠিতে জানানো হয়, তামহার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা গুলশানের বাড়ি বিক্রির পর বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরত দেয়ার চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা দখলে রাখেন। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ওবায়দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এই প্রতারণার কাজে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।

বিএসইসি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সম্প্র্রতি মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে দুদক বরাবর একটি চিঠি পাঠায়। এতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ২০২১ সালেই প্রথম বড় ধরনের অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় ৮৭ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করে। তদন্তে ওঠে আসে, তারা দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করত- একটি সিডিবিএলের (সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড) সঙ্গে সংযুক্ত, আর অন্যটি ছিল অভ্যন্তরীণ। অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারটি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভুয়া স্টেটমেন্ট দেখিয়ে শেয়ার বিক্রি করা হতো।

তদন্তে দেখা গেছে, গ্রাহকের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৯২ কোটি টাকা মূল বিনিয়োগের ঘাটতি ও ৪৭ কোটি টাকা শেয়ারের বাজার মূল্যের ঘাটতি।

মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়েরের ভিত্তিতে বিষয়টি দুদকে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তামহার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জি আর মামলা (নম্বর ৫৩/২০২৩) করে।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, একাধিক অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, গাড়িচালক, এমনকি অফিস সহকারী পর্যন্ত। এদের অনেকের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বিএসইসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন সবসময় সচেষ্ট। কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সে জন্যই তামহার সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তামহার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামে থাকা লালমাটিয়ার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ করার আবেদনও করেছিল বিএসইসি।

তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হয়। একসময় স্বাভাবিকভাবে শেয়ার লেনদেন করলেও বর্তমানে এর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণা, আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করছে।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে করা মামলার আসামিরা হলেন- তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, পরিচালক জাহানারা পারভীন ও ড. শাহনাজ বেগম, চারজন অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (আব্দুর রহমান তালাল, সাঈদ চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান), অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. গোলাম রসুল, শেরাটন শাখার ইনচার্জ ও অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ এ এম আলমগীর কবীর, শেরাটন শাখার ম্যানেজার ও অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ওয়ারিছ উদ্দিন, অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফায়েজুর রহমান, সেটলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথোরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ জি এম আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক মো. মামুন হোসেন ও অফিস সহকারী মো. হাসান।