শেয়ার বিজ ডেস্ক : দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। গত সোমবার মধ্যরাতে বিলুপ্ত করা হয়েছে এনবিআর। সেই সঙ্গে সংস্থাটি ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
গত সোমবার রাতে জারি করা অধ্যাদেশে শুধু রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করেই বহুল আলোচিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলো প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। রাজস্ব সংগ্রহের মূল কাজ করবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এনবিআর বিলুপ্ত করার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে যে দুটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মূল লক্ষ্য হলো https://www.shumanbd.com/wp-content/themes/shumanbd_v3/images/shumanbd-logo-blk.pngকরনীতি প্রণয়ন ও কর ব্যবস্থাপনার কাজ আলাদা করা। দক্ষতা বাড়ানো, স্বার্থের সংঘাত হ্রাস ও দেশের কর ভিত্তি প্রসারিত করাও এর লক্ষ্য।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এনবিআর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ; এটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। বিশ্বে কর-জিডিপির গড় অনুপাত ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি মালয়েশিয়ায় এই অনুপাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে অন্তত ১০ শতাংশ কর-জিডিপির অনুপাত অর্জন করতেই হবে।
প্রেস উইং বলেছে, কর-জিডিপির অনুপাতের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর পুনর্গঠন জরুরি। একই সংস্থা করনীতি প্রণয়ন এবং সেই নীতির বাস্তবায়ন করবে- এ অবস্থান সাংঘর্ষিক। সেই সঙ্গে এটা ব্যবস্থা হিসেবে অদক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, নীতি প্রণয়নে রাজস্ব আহরণকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে; ন্যায়বিচার, প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা উপেক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবাদে কাল থেকে কলমবিরতি : এদিকে, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এড়িয়ে ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুই ভাগ করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে এনবিআরের অধীন সব কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন, কর অঞ্চল ও ভ্যাট কমিশনারেটে তিনদিনের কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগারগাঁও এনবিআরের সামনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে গতকাল মঙ্গলবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কলম বিরতির ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হলে ১৭ মে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও অবস্থান কর্মসূচিতে জানানো হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস ও ভ্যাট) সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সোমবার অধ্যাদেশটি জারি হয়েছে। এই সংস্কারে সরকার যে কমিটি করেছে, সেখানে দেশের যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু সেই কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। প্রত্যাশী সংস্থা হিসেবে আমরাও জানতে পারিনি। ভালো-মন্দ কিছুই জানতে পারিনি। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে, আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করে গতকাল রাতে অনেকটা গোপনীয়ভাবে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে, যা অন্যান্য অধ্যাদেশের মতো নয়। আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই, অধ্যাদেশটি বাতিল করে পরামর্শক কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের ভালোর জন্য, দেশের রাজস্ব ও মানুষের ভালোর জন্য নতুন অধ্যাদেশ জারি হবে। অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য আমরা তিনদিনের কলম বিরতি দিয়েছি।
তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, ১৫ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা ও ১৭ মে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি পালন করবে। তবে কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, আমদানি-রপ্তানি ও বাজেট-এই তিনটি কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সব কার্যক্রম কলম বিরতির আওতায় বন্ধ থাকবে। আগামী ১৭ মে বিকেল তিনটায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, এনবিআরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি এবং দুটি নতুন বিভাগ গঠনের এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক মহলে আলোচনার জš§ দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই পদক্ষেপ রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তুলবে। এখন দেখার বিষয়, নতুন এই কাঠামো দেশের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কতটা সহায়ক হয়।