সুফল পেতে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

ঐকমত্য হওয়ায় আগামী মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ঋণের অর্থ আসবে। বুধবার আইএমএফ ও অর্থ মন্ত্রণালয় আলাদা বিবৃতিতে ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে। শর্ত পালনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে উভয় পক্ষ। প্রাপ্ত তথ্যমতে, আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের কাছ থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়ার আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আইএমএফ নির্বাহী বোর্ড অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ ঋণের পরবর্তী কিস্তি পাবে। তবে এজন্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও বিনিময় হার সংস্কারসহ কিছু শর্ত পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে ডলারের বিনিময় হার নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে দর-কষাকষি চলে আইএমএফ ও সরকারের মধ্যে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির আরেক শর্ত ছিল রাজস্ব খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বা আইআরডি বিলুপ্ত করতে হবে। সেটি মেনেই মূলত এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

আইএমএফ জানায়, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি কঠোর নীতি গ্রহণ, কর অব্যাহতি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, বিনিময় হারকে নমনীয় করা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করা, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আইনি সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, শাসনব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা বাড়িয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় টেকসই অবকাঠামোয় বিনিয়োগ ও রাজস্ব সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে। সাধারণত কোনো বিদেশি ঋণ নিলে সেটি পাওয়ার শর্ত নিয়ে কথা হয়, সমালোচনা হয় এবং ‘দেশ বিক্রির’ তির্যক প্রশ্নও ওঠে। যেকোনো ঋণদাতার প্রত্যাশা থাকেÑঋণের সদ্ব্যবহার হোক। দেশ উন্নয়নের কথা বলে ঋণ নিয়ে তা যথেচ্ছ ব্যবহার কিংবা লোপাট করা কোনো দেশপ্রমিকের কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, ওই ধরনের কথাই বেশি শোনা যায় আমাদের দেশে। সেটি সর্বাংশে অসত্য, তাও কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে এখন রাখঢাক করে চুক্তি হয় না। সবই অনলাইনে সন্নিবেশ করা হয়। আইএমএফ যেসব শর্তের কথা উল্লেখ করেছে, সেগুলোর কোনোটিই অনাকাক্সিক্ষত নয়। বরং অনেক বেশি প্রাসঙ্গিকই বটে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করা, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আইনি সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে, তাতে আমরা আশাবাদী।