ওয়ান ব্যাংকে ৮৩ কোটি টাকা ঋণখেলাপি ওয়েল গ্রুপ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং তার পারিবারিক মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপ ওয়েল গ্রুপ। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়েল ডিজাইনার্স লিমিটেড, সানজি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও ওয়েল ট্রেড নামের তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ হলো ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৪১ টাকা। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকার ওয়েল ডিজাইনার্সের ২০ শতক জমিসহ নয়তলা ভবন নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।

ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা সূত্রে জানা যায়, ওয়েল গ্রুপ ওয়ান ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়েল ডিজাইনার্স, সানজি টেক্সটাইল ও ওয়েল ট্রেড-এ তিন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে ছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে ওয়েল গ্রুপের উদ্যোক্তারা ব্যাংকের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হন। গত ৩০ এপ্রিল নিয়ম অনুসারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়। এ সময় সুদাসলে মোট ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৪১ টাকা খেলাপি হয়। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা ওয়েল ডিজাইনার্সের ২০ শতক জমিসহ নয়তলা ভবন নিলামে বিক্রিয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ১৯ জুন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখায় বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হবে। এতে আগ্রহী ক্রেতাকে উপস্থিত হয়ে এসব সম্পত্তি নিলামে কিনতে পারবেন।

ওয়েল গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর আবদুচ ছালাম ও তার এক বন্ধুর সঙ্গে পার্টনারশিপে সেলাই সুতা তৈরির কারখানা দিয়ে ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেন। একেবারে ছোট পরিসরে সাভারে স্থাপন করা হলো ওয়েল থ্রেড লিমিটেড। তবে পার্টনারশিপটা বেশিদিন টিকল না। সিদ্ধান্ত হলো যন্ত্রপাতি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নতুন নামে ভাইদের নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন সালাম। সানজি টেক্সটাইল মিলস নামে নতুন কোম্পানি গঠন করা হলো, বর্তমানে ওয়েল গ্রুপের অন্যতম বড় শিল্প ইউনিট। দেশের বড় সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি তৈরি পোশাকশিল্প খাতে ওয়েল থ্রেড নামে পরিচিত। এরপর ওয়েল মার্ট, ওয়েল ফ্যাশনÑইউনিট ১ ও ইউনিট ২, ওয়েল ড্রেসেস, ওয়েল ফেব্রিকস, ওয়েল অ্যাকসেসরিজ, ওয়েল কমপোজিট নিট, ওয়েল ফুড, আবাসন, হোটেল, রিসোর্ট প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ওয়েল গ্রুপ। এ গ্রুপে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ওয়েল গ্রুপের পরিচালক ও সাবেক বিজিএমইয়ের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসেন্ট সার্কুলার অনুযায়ী রি-শিডিউল ও রি স্ট্রাকচারের প্রসেসিং করছি। ওয়ান ব্যাংকও কাজ করছে। তবে খেলাপি হিসেবে সম্পত্তি নিলামে তোলার বিষয়ে আমি জানি না।

ওয়ান ব্যাংকে খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক শাহ আলম ভূইয়া এ বিষয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘করপোরেটের বিষয়গুলো হেড অফিসে দেখাশোনা করে। আমি রিটেইল বিজনেস দেখি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ান ব্যাংকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওয়েল গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় ৮৪ কোটি টাকা। তারা ঋণ পরিশোধের তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যদিও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করা হয়েছে, যা আদালতে বিচারকার্য চলমান আছে। পাওনা আদায়ে বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি আইন অনুসারে নিলাম করছি। এতে সাড়া না পেলে অর্থঋণ আদালতে মামলা করব।’