জনকল্যাণে ব্যয় হবে পাচারের জব্দ টাকা : গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকার টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব টাকা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। লুট করা টাকা থেকে যা ফিরিয়ে আনা হবে তা দিয়ে একটি ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই টাকা জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হবে। রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে এ কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, পাচারকারীদের লুটের জব্দকৃত টাকা ও শেয়ার দরিদ্রদের জন্য এবং জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হবে। গভর্নর বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে চার-পাঁচ বছর লেগে যাবে। তবে এক বছরের মধ্যে বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা যাবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকের লুটের যেসব টাকা জব্দ করা হয়েছে, তা নিয়ে ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের টাকা জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা হবে। গভর্নর বলেন, আইনের সঠিক ধারা মেনেই সবকিছু করা হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা হবে। নগদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগদের বোর্ডে যারা ছিল, তারা দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা এবং সরকারে মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। তাই বোর্ডের কাছে নগদের পরিচালনা কার্যক্রম দেয়া যাবে না। আইনের কারণে তারা অনেক কিছু করতে পারে, সেজন্য ব্যাংকগুলো বড় কোনো লেনদেন করতে পারবে না।

এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের পাশাপাশি ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর এক লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার অর্থ অ্যাটাচমেন্ট আছে। ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার (দেশীয় মুদ্রায় পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা) এবং ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি স্থিতি (ফ্রিজিং) অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে ২৫৩ কোটির (দুই কোটি সাত লাখ ডলার) অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ আছে। এই অর্থ থেকে একটি ‘লুটের টাকা ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠন করা হবে, যা সরকারের ব্যবস্থাপনায় থাকবে।

সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দলের অনুসন্ধানে ১০ শিল্পগোষ্ঠীসহ শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাংকঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচার করা অর্থের খোঁজ মিলেছে এস আলম গ্রুপের। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার একটি বিশেষ অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সঙ্গে এই অর্থ উদ্ধারে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হবে, তা নির্ধারণের কাজও চলছে। এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচার করা অর্থ উদ্ধারে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ দল।