বেসরকারি কোম্পানির দাপট

প্রতিযোগিতায় পিছিয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : দেশে বছরে লুব্রিকেন্ট অয়েলের চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স বিক্রি করে মাত্র ৫৬৩ মেট্রিক টন, যা চাহিদার এক শতাংশেরও কম। মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপটে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্সের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার মেট্রিক টন।
ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্সের ব্যবসা দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি হলো লুব্রিকেন্টস অয়েল বিক্রি ও আমদানি গ্রিজ। গত অর্থবছরের ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স বিক্রি করে মাত্র ৫৬৩ মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৬৮২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ১৩০ মেট্রিক টন, যা শতাংশ হিসাবে ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অথচ দেশে বছরে লুব্রিকেন্ট অয়েলের চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এ চাহিদার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস এক শতাংশও পূরণ করতে পারে না। যদিও প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার মেট্রিক টন। অপরদিকে প্রতিষ্ঠন গ্রিজ বিক্রিও আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ইস্টার্নের গ্রিজ বিক্রি ছিল মাত্র ১৪ মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন টন বেশি। মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপটে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্সের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি’র সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি ’২৫-মার্চ ’২৫) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ৯৪ পয়সা আয় হয়েছে। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৪১ পয়সা আয় হয়েছিল। অন্যদিকে তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৫ টাকা ৯৩ পয়সা, যা গত বছর একই সময়ে ৮ টাকা ৩৯ পয়সা আয় হয়েছিল। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশফ্লো ছিল ৫৭ টাকা ৬৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭১ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৯২ টাকা ১৪ পয়সা।
কোম্পানির হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা হলেও রিজার্ভের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা, যা পরিশোধিত মূলধনের ১৮ গুণ। প্রতি বছর কোম্পানি ভালো মুনাফা করলেও শেয়ারহোল্ডারদের তাদের ন্যায্য মুনাফা না দিয়ে বছরের পর বছর রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ব্যবসা সম্প্রসারণ না করে টাকাগুলো দিয়ে এফডিআর সুদের ব্যবসা করছে। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা ছিল কম মূলধনি কোম্পানিগুলোকে পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৩০ কোটিতে রূপান্তর করতে বলা হলেও পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী বলেন, ইএলবি পিএলসি প্রায় ৬৫ বছরের পুরোনো কোম্পানি হলেও দেশের একমাত্র সরকারি ব্লেন্ডিং কোম্পানিকে কেন কর্তৃপক্ষ মবিল-যমুনার মতো একটি আধুনিক প্ল্যান্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক বিদেশি কোম্পানি ইএলবি পিএলসি’র সঙ্গে টোল ব্লেন্ডিংসহ আধুনিক প্লান্ট তৈরি করার পরিকল্পনা করলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেনি।
দীর্ঘদিনের বৈষম্যের শিকার এই কোম্পানিকে আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ না করার জন্য একটি কুচক্রী মহল তৎপর।
এ বিষয়ে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের বাজার অংশীদারত্ব অনেক কম। মূলত বেসরকারি খাতের কোম্পানিদের উৎসাহিত করতে গিয়ে আমাদের দিনে দিনে ব্যবসা কমেছে। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানায় রয়েছে ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১৫ দশমিক ০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার।