সূচকের পতনেও লেনদেন বেড়েছে পুঁজিবাজারে

নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন থামছেই না। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় দেশের দুই পুঁজিবাজারেই লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে।

ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে ডিএসই শরিয়াহ সূচক শূন্য দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ডিএস৩০ সূচক ৪ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৭৪১ পয়েন্টে নেমেছে। তবে লেনদেনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে।

ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৩টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৬৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৭৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।

এদিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ২১৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৭৭ কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১০০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩৬ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।

একইভাবে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ছয়টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটাগরির ৯৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
এদিকে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১২টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ছয়টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৮টি ফান্ডের ইউনিট দর।

ডিএসইতে গতকাল মোট ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৮টি শেয়ার ও ইউনিট ১ লাখ ৭ হাজার ৪৯১ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ২৮২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ১৭৪টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ১৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, গতকালের পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের পতন এবং বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমে যাওয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা এও মনে করছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ এবং বড় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থান বাজারের এই টানা পতনের অন্যতম কারণ। সামনের দিনগুলোতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো জরুরি বলে মনে করছেন তারা।